আল্লাহ তাআলা আখেরাতে ইহজীবনের ভালো-মন্দ
কাজের প্রতিদান দেবেন। যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার বিধান মেনে জীবন কাটিয়েছে,
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতসহ আরও অনেক নিআমত দান করবেন। কুরআন কারীমের ভাষায় তারাই
সফলকাম। জান্নাতে তারা নিআমত উপভোগ করতে করতে বলবে, ‘আমাদের প্রতিপালক
আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা তা সত্য পেয়েছি।’ -সূরা আরাফ
(৭) : ৪৪
অন্যদিকে যারা দুনিয়ায় আল্লাহ ও রাসূলের
অবাধ্যতায় জীবন কাটিয়েছে, তারা সেদিন চরম ব্যর্থ হবে। সেদিন অনুতাপ করে তারা নিজেদেরকেই
দোষারোপ করতে থাকবে। আর বলবে, ‘হায় আফসোস! যদি
এমন না করতাম!’
আখেরাতে বিফল জাহান্নামীরা কীভাবে আফসোস
করবে, তা বিশদভাবে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: দাম্পত্য জীবনে রসুলের (সা.) সুন্নাত
আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি জমিনের
উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।’ (সুরা কাহাফ,
আয়াত : ০৮)
কিয়ামতের দিন নেককার, বিশ্বাসী এবং আল্লাহতে
অবিশ্বাসী প্রত্যেকেই তার আমলনামা, কাজকর্ম নিজের চোখে দেখতে পাবে। সেদিন অবিশ্বাসী
কাফেরেরা নিজেদের বদ আমল দেখে আফসোস করবে।
এ বিষয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.
থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন ভূপৃষ্ঠ সমতল ভূমিতে রুপান্তর করা হবে। সবার হিসাব নেওয়া
হবে। কেউ কারো ওপর জুলুম করলে তার কাছ থেকে এর বদলা নেওয়া হবে। পশু-পাখি জীব-জন্তুদের
মধ্যে কেউ দুনিয়াতে কারো ওপর জুলুম- অত্যাচার করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া
হবে। পশু-পাখির হিসাব নেওয়া শেষ হলে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমরা মাটি হয়ে
যাও’। তখন সব মাটি
হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: গোঁফ ভিজিয়ে পানি পান কি হারাম?
এ দৃশ্য দেখে তখন অবিশ্বাসী কাফেরেরা আফসোস
করে বলবে, ‘হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম। এমন হলে আমরা হিসাব-নিকাশ
ও জাহান্নামের আজাব থেকে বেঁচে যেতাম।’ (তাফসিরে মাআরিফুল
কোরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৬৮১, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১১ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৩৯৪, সূরা নাবা,
(৭৮), আয়াত, ৪০, পারা, ৩০)
জাহান্নামীরা আল্লাহ তাআলার কাছে অনুনয়
করে শাস্তি এড়াতে না পেরে কমাতে চাইবে। জাহান্নামের পাহারাদার ফেরেশতাগণকে তারা বলবে,
আপনারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করুন, যেন আমাদের শাস্তি খানিকটা কমিয়ে দেন, অন্তত এক
দিনের জন্য হলেও কিছুটা লাঘব করে দেন। ফিরিশতাগণ তাদের হয়ে সুপারিশ করবেন না।
তারা জান্নাতীদেরকে ডাক দিয়ে বলবে, (তরজমা)
‘আমাদের ওপর একটু
পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে নিআমত দান করেছেন, তার সামান্য কিছু
হলেও দাও। জান্নাতীরা বলবে, এসব নিআমত আল্লাহ তাআলা কাফেরদের জন্য হারাম করেছেন।’ -সূরা আরাফ
(৭) : ৫০
জান্নাতীদের সঙ্গে তাদের এমন কথাও হবে
যে, জান্নাতীরা জিজ্ঞেস করবে, তোমরা জাহান্নামে কেন? তারা উত্তরে বলবে, (তরজমা) ‘আমরা নামায পড়তাম
না, মিসকীনদেরকে খাওয়াতাম না,... আখেরাত দিবসকে অস্বীকার করতাম। এখন এই নিশ্চিত বিষয়টি
আমাদের সামনে এসে গেছে।’ -সূরা মুদ্দাছ্ছির (৭৪) : ৪৩-৪৭
আরও পড়ুন: যে প্রস্তাবে ‘কবুল’ বললেই বিয়ে হয়ে যাবে
কাজেই এখন আর তাদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে
না।
এভাবে তারা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যাবে।
আরহামুর রাহিমীন তাদের কথা শুনবেন না। রাসূল ও ফিরিশতাগণ তাদের জন্য সুপারিশ করবেন
না। হাশরের ময়দানে তাদের স্বজন-পরিজন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। শয়তানও তাদের উপকার
করতে ব্যর্থ হবে। তখন তারা আফসোস করে বলবে, ‘হায়! যদি আমরা
মাটি হয়ে যেতাম।’ তারা মাটির সাথে মিশে যেতে চাইবে। নিজেদের
অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চাইবে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। আল্লাহ
তাআলা কুরআনে অনেক জায়গায় বলেছেন, আমি জানি, শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার পরে তারা কী বলবে।
বিভিন্নভাবে তিনি কুরআনে তা ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়েত দান করুন,
যেন সময় থাকতেই নিজেদেরকে শুধরে নিতে পারি। রাব্বুল আলামীন যে ভয়াবহ দিবসের ব্যাপারে
বহুবার সতর্ক করেছেন, সেই চূড়ান্ত ফলাফলের দিন যেন আমাদেরকে আফসোস করতে না হয়। যাদের
ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদেরকে তো সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তোমরা তা শোনোনি।
কাজেই এখন তোমাদের কথাও শোনা হবে না। তোমরা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকো। আমরা
যেন সেদিন ওই দলভুক্ত না হই, যাদের ব্যপারে রাসূল বলবেন, আল্লাহ! এরা আপনার কথা বিলকুল
পরিত্যাগ করেছিল।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে রক্ষা করুন এবং তাঁর
পথে ফিরে আসার ও দ্বীনের উপর অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন।