শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের
বাসভবনের বাইরে সহিংসত বিক্ষোভের জেরে কলম্বোর বেশ কয়েকটি এলাকায় জারি করা করাফিউ তুলে
নেওয়া হয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে নারীসহ ৪৫ জনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
শুক্রবার (০১ এপ্রিল) ভোর ৫টায় কারফিউ প্রত্যাহার করা হয় বলে কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র
এসএসপি নিহাল থালডুয়ার বরাতে জানায় শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর।
দেশটিতে অর্থনৈতিক
বিপর্যয়ের জন্য সরকারকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার রাতে কলম্বোর মিরিহানায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া
রাজাপাকসের একটি ব্যক্তিগত বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকশ মানুষ।
তারা প্রেসিডেন্টের
বাসভবনে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শেষ পর্যন্ত টিয়ার শেল
আর জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর রাতেই কলম্বো
উত্তর, দক্ষিণ, কলম্বো সেন্ট্রাল, নুগেগোদা, মাউন্ট লাভিনিয়া এবং কেলানিয়া এলাকায়
কারফিউ জারি করা হয়।
পুলিশের মুখপাত্র
নিহাল থালডুয়া বলেন, বিক্ষোভের সময় সেনাবাহিনীর একটি বাস, জিপ, থ্রি-হুইলার, দুটি
ট্রাফিক মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বিক্ষোভে পুলিশ,
স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) সদস্য এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে
ভর্তি রয়েছেন।
ওই ঘটনায় আটক
ব্যক্তিদের নুগেগোদা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন নিহাল থালডুয়া।
এদিকে মিরিহানায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের নেপথ্যে একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী
জড়িত বলে দাবি করেছে প্রেসিডেন্সিয়াল মিডিয়া বিভাগ (পিএমডি)।
এক বিবৃতিতে পিএমডি
বলেছে, সংগঠিত চরমপন্থিদের একটি দল নুগেগোদার জুবিলি পোস্টের কাছে বিক্ষোভ করছিল। হঠাৎ
তা দাঙ্গায় রূপ নেয় এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় অনেককে আটক করা হয়েছে এবং তাদের
অনেকেই সংগঠিত চরমপন্থি।
এ বছর কলম্বোকে
প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, অথচ ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তাদের বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভে ছিল ২৩০ কোটি ডলারের মত। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশটির মানুষকে
এখন প্রতিদিনি ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে, কারণ জ্বালানি তেল আমদানির মত যথেষ্ট
বিদেশি মুদ্রা দেশটির সরকারের হাতে নেই।
দেউলিয়া হতে বসা
শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফের
একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বলেছেন, এ বিষয়ে তারা শিগগিরই কলম্বোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত মাসে শ্রীলঙ্কা তাদের একমাত্র
তেল শোধনাগারটি বন্ধ করে দেয়। ডিজেল সঙ্কট যত বাড়বে বিদ্যুতের লোডশেডিংও তত বাড়তে থাকবে।
বিদ্যুৎ না পাওয়ায়
দেশটির প্রধান স্টক মার্কেটে লেনদেনের সময় কমিয়ে এনেও কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বাঁচাতে
সড়ক বাতিও নিভিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ মন্ত্রী পবিত্র ভান্নিয়ারাচ্চি।
শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান
বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ।
খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে,
অর্থনৈতিক এই সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার রাতে ওই
বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের
বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মোটরসাইকেলের হেলমেট পরিহিত একদল বিক্ষোভকারী একটি দেয়াল
ভেঙে ফেলে এবং পুলিশের দিকে ইট ছুড়ে মারে। পরে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পথে একটি বাসে
আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে দেশটির সরকার।