বাংলাদেশে সফররত মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যান সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ, গণতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও রাজনৈতিক দলের সংলাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গুলশানের বাসভবনে এই বৈঠক হয়। এতে দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক শেষে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমার বক্তব্য সব সময় একই—মানবাধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এসব সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলাপ মুখ্য না। নানা বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।’
আর্টিকেল-১৯-এর দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করা দরকার। সে লক্ষ্যে কী কী করা দরকার, সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে। তারা জিজ্ঞেস করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল কি-না? আমরা বলেছি, বাংলাদেশে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, এখন নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না, সেটা রাজনৈতিক দলগুলো বলতে পারবে। আমরা সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে গেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, সকল রাজনৈতিক দলের সংলাপ দরকার আছে। সংলাপের মাধ্যমেই আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি কেমন হবে, তা ঠিক হবে। আমাদের নির্বাচন কেমন হবে, ইউরোপ-আমেরিকা ঠিক করতে পারবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংকট আমাদের সংলাপের মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে।’
আলোকচিত্র শিল্পী-সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেন, ‘এটি ঘরোয়া আলাপ ছিল। পিটার হাসের ভাষায়, হিরোজ অব বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনেকে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, সেসব কথা উঠেছে। আমাকে যেই আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তা নিয়ে এখনও আমি ভুগছি, আলোচনায় উঠে আসে এসব কথাও।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া সুশীল সমাজের অন্য প্রতিনিধিরা হলেন—প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান, অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, বেলার নির্বাহী প্রধান ও পরিবেশকর্মী ড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান, সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার, পরিবেশকর্মী শিরিন হক, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিশ চৌধুরী, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খন্দকার মুর্শিদা ফারহানা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তা ম্যাথিউ বেহ ও আর্টরো হাইন্স।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান রিচার্ড ম্যাকরমিক ও এডওয়ার্ড কেইস আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা তুলে ধরেছেন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে দুই কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।