
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের
অষ্টমী তিথিতে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং ধর্ম রক্ষার লক্ষ্যে মহাবতার ভগবান রূপে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। অর্ধরাত্রিকাল সময় রোহিণী নক্ষত্র উঠলো।সঙ্গে সঙ্গে
প্রকৃতি মাতা তাঁর ভাণ্ডার উন্মোচন করে দিলেন।
চতুর্দিকে এক
দিব্যজোতি দেখা গেলো। বনের পশু, পক্ষী, বৃক্ষ প্রত্যেকেই নিজ নিজ আনন্দে উদ্ভাসিত হলো।
নদী, সাগরে জলতরঙ্গের জোয়ার উঠলো। চতুর্দিকে কেবল আনন্দ। স্বর্গের দেবতারা স্তব করতে
লাগলেন, আনন্দ শঙ্খধ্বনি বাজাতে শুরু করলেন এবং পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন। এই শুভ মুহূর্তে
বসুদেব চর্তুভূজ, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী সুন্দর আকৃতি ও তেজঃপুঞ্জ কলেবর সেই নবজাতককে
দেখতে লাগলেন। ভগবান তাঁর পুত্ররূপ নিয়ে জন্ম নিয়েছেন।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি
ও দেবকী ভগবানের স্তব করতে আরম্ভ করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বসুদেব ভগবানের আদেশ অনুসারে
পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে কংসের কারাগার থেকে বাইরে এলেন। একে একে বৃহৎ লৌহ কপাট সব খুলে
গেল।
ঠিক তখনই যশোদার
গৃহে যোগমায়া জন্ম নিলেন। প্রচণ্ড বজ্রবিদ্যুৎপূর্ণ রাতে অনন্তদেব সহস্র ফনা বিস্তার
করে বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তারের জন্য বসুদেবের পিছু নিলেন। মথুরাবাসী এবং ব্রজবাসীদের
অজান্তে নিশুতি রাতের সমস্ত ঘটনার সাক্ষী রইলেন শুধুমাত্র দেবতারা।
এদিকে নন্দের
পুত্র জন্মগ্রহণ করার পর পরমানন্দে নতুন বস্ত্র ধারণ ও তিলক লেপে ব্রাহ্মণকে ডেকে পুত্রের
জাত কর্ম করালেন। ব্রজবাসীরা মহানন্দে নন্দ উৎসব করতে লাগলেন। ব্রজের গোপরা আনন্দে
আত্মহারা হয়ে গেলেন। কৃষ্ণের জন্ম সংবাদে আকাশ-বাতাস, জল, পশু, পক্ষী, বাগানের পুষ্প
সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো। ব্রজবাসীর ঘরে আনন্দের প্লাবন।
শোভাযাত্রা কয়েক
লাখ মানুষের অংশগ্রহণে পরিণত হয় মিলনমেলায়। বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বাদ্য
বাজনা বাজিয়ে মহাশোভাযাত্রা রাজপথ পরিভ্রমণ করে। শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে
বিভিন্ন বয়সের মানুষের ছিল সরব অংশগ্রহণ, যেন কৃষ্ণ প্রেমের এক অদৃশ্য টানে ছুটে চলেছেন
তারা শেকড়ের সন্ধানে।