মদ পানের প্রভাবে
নয়, বিষপানেই মারা গেছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক। দুজনের
মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের
কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল
উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. কফিল উদ্দিন
বলেন, ‘দুই কৃষকের মরদেহের
ময়নাতদন্তের সময় নেওয়া নমুনা আমরা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছিলাম। ওই রিপোর্ট
আসার পর চূড়ান্ত রিপোর্ট করেছি। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত দুজনের শরীরে কীটনাশকজাতীয়
বিষ পাওয়া গেছে। এটি অর্গানো ফসফরাস যৌগ নামে এক ধরনের কীটনাশক। তাই আমরা চূড়ান্তভাবে
প্রতিবেদন দিয়েছি যে বিষপানের কারণেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে।’
গত ২৩ মার্চ নিমঘুটু
গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। অভিনাথ
রাতেই বাড়িতে মারা যান। আর ২৫ মার্চ হাসপাতালে মারা যান রবি। অভিনাথের বাড়ি থেকে যখন
মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করছিল তখন পরিবার অভিযোগ করে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের
(বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে পানি পাচ্ছিলেন না দুই কৃষক। নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক
লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন তাঁদের পানি না দিয়ে বিষপান করতে বলেছিলেন। এরপর দুজনে
ক্ষোভে দুঃখে বিষপান করেন।
তবে পরিবারের
এমন অভিযোগে পাত্তা দিচ্ছিল না পুলিশ ও প্রশাসন। সে সময় সাখাওয়াত দাবি করেন, ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা চোলাই মদ পান করেন। এ কারণে অভিনাথের মৃত্যু হতে পারে। পুলিশ-প্রশাসনের
অনেকেই এ দাবিতে সায়ও দিয়েছেন। ২৫ মার্চ অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম থানায় যান
আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করতে। পুলিশ মামলা না নিয়ে দীর্ঘ সময় তাঁকে বসিয়ে রাখেন।
খবর পেয়ে থানায়
যান ‘আদিবাসী বিষয়ক
সংসদীয় ককাসের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স
পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তখন পুলিশ সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার
প্ররোচনার মামলা নেয়। পরে রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডিও আত্মহত্যার প্ররোচনার
মামলা করেন। পানির জন্য দুই কৃষকের আত্মহত্যার খবর প্রচার হলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু
হয়।
ঘটনার ১১ দিন
পর পুলিশ অভিযুক্ত সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। সেদিনই বিএমডিএ তাঁকে চাকরিচ্যুত করে।
পরে আদালতের আদেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াতকে দুইদিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হয়। আর আলাদা তদন্ত করেছে বিএমডিএ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী
থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে দুই কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্ত
প্রতিবেদন এসেছে। সেখানে আজ মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় গিয়েই এ বিষয়টি শুনলাম। কীটনাশক
পানের কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ওসি বলেন, কারাফটকে
জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্ত সাখাওয়াত নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তাঁর পানি
বণ্টনে অনিয়ম ছিল। এখন যেহেতু দুই কৃষকের মৃত্যুর কারণ বিষপান বলা হয়েছে, সুতরাং আত্মহত্যার
প্ররোচনার মামলার মধ্যেই এটি পড়ে। মামলাটি এখন সেভাবেই পরিচালনা করা হবে। এ মামলার
চার্জশিট হবে।