এডিস মশার উৎস খুঁজতে ঢাকার পর এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও (চসিক) ড্রোন ব্যবহার করছে। বাসাবাড়ি, অফিস–আদালতের ছাদবাগান ও অন্যান্য উৎসে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা খুঁজতে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে। প্রথমদিনে বিভিন্ন বহুতল ভবনের সুইমিংপুল আর ছাদবাগানে জমে থাকা পানিতে গড়ে ওঠা মশার আবাসস্থল।
রোববার নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে চালানো অভিযানে উঠে আসে এ চিত্র। ৮৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ৭টি ভবনকে। বাকী ভবন মালিকদের সতর্ক করা হয়। সচেতনতা সৃষ্টিতে নাগরিকদের মাঝে লিফলেট দেয়া হয়।
অভিযানে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা আজকে ড্রোন দিয়ে বহুতল ভবনগুলোর ছাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রায় সবগুলো ভবনের ছাদেই পানি জমে থাকতে দেখেছি। আজ সবাইকে ডেকে সতর্ক করছি, পরবর্তীতে উনারা জমে থাকা পানি না সরালে জরিমানাসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিব।
এতে ৪৩৫টি ঝুকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে লার্ভিসাইডসহ বিভিন্ন মশা নিধনকারী ঔষধ ছিটাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে সাফল্যপ্রাপ্তিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু অসচেতন বাড়ি মালিকের ছাদে জমে থাকা পানি। বিশেষ করে সুইমিংপুল আর ছাদবাগানগুলো মশার নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। অনেক বাড়ির মালিক আবার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের কর্মীদের ছাদে উঠতে দেননা। আমরা মশার ঔষুধ ছিটাচ্ছি নালা-নর্দমায় কিন্তু আবাসিক ভবনগুলাই হয়ে উঠছে মশার বড় আবাসস্থল। তাই বাধ্য হয়ে ড্রোন দিয়ে ছাদ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।
নগরের ৪১ ওয়ার্ডের অনাবাদি জমি, নালা ও ঝোঁপঝাড়, ডোবা, খাল, পুকুর–জলাশয়, পরিত্যক্ত বাড়িতে জরিপ চালিয়ে মশার ৪৩৩টি প্রজননস্থল চিহ্নিত করে সংস্থাটির ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা। এসব প্রজননস্থলকে হটস্পট ধরে কীটনাশক ছিটানোর উপর জোর দিচ্ছে চসিক। ড্রোন অভিযানে যেসব বাসা–বাড়ির ছাদবাগানে এডিস মশার উৎসস্থল পাওয়ায় যাবে ওসব ভবন মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে জানায় চসিক।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, মশা খুঁজতে চসিক ‘ডিজেআই ম্যাভিক এয়ার এস২’ মডেলের ড্রোন ব্যবহার করবে। এটার ওজন ৫৯৫ গ্রাম। ড্রোনে থাকবে ৪৮ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা। মাটি থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে উঠে ছবি বা ভিডিও করা যাবে এ ড্রোন দিয়ে। এছাড়া যিনি ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করবেন তার চতুর্পাশে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এ ড্রোন। ড্রোনটির জন্য প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হবে। প্রাথমিকভাবে নগরের ৬০টি আবাসিক এলাকায় এ ড্রোন অভিযান পরিচালনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়।
অভিযানে মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, মশার সংক্রমণ কমাতে আমরা ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে জোর দিচ্ছি। আজকে আরবান ভলান্টিয়ার ও রেডক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ারদের ৮টি টিম গঠন করে নগরীর ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে তাদের বাসায় জমে থাকা পানি অপসারণের আহবান জানানো হচ্ছে এবং মশার ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে । এসময় ছাদে মশার লার্ভা ও আবাসস্থল পাওয়ায় চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন ৭টি ভবনের মালিকপক্ষকে মোট ৮৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি জানান, নগরীর মোট ৬০টি আবাসিক এলাকায় ক্রমান্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ক্রাশ প্রোগ্রামকে সফল করতে মশক নিধনে লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর মোঃ মোরশেদ আলম, জেসমিন পারভীন জেসীসহ নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গত ২২ জুন চকবাজার ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের সামনে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০০ দিনের আরেকটি ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়। এ কর্মসূচি প্রায় ১৭ দিন চললেও মশার উপদ্রব না আসার অভিযোগ করেছেন নগরবাসী। এতে নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে অভিযোগ। চলতি জুলাই মাসের প্রথম সাতদিনে ২৫৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।