মশার কামড়ে বিরক্ত হননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। লাগামহীনভাবে বাড়ছে মশার উপদ্রব। বিরক্তিকর এই পতঙ্গের প্যানপ্যানানি এবং কামড়ের যন্ত্রণাও নাহয় সহ্য করা যায়, কিন্তু এর কারণে সৃষ্ট অসুখ-বিসুখ থেকে কীভাবে বাঁচবেন? মশার কামড়ের কারণে যেসব অসুখ হতে পারে তার একটিও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বরং কোনো কোনো অসুখে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। গরমের সময় এলে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মশার উপদ্রব। বৃষ্টি হলে সেই পালে হাওয়া লাগে যেন। মশার যন্ত্রণায় তখন নিজের ঘরেই থাকা দায়। মশারি টাঙিয়ে আর কতক্ষণ নিজেকে রক্ষা করা যায়! একে তো করোনাভাইরাসের আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি, তার ওপর যোগ হয়েছে মশার অত্যাচার। এসময়ে অতিরিক্ত সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
মশার কামড় থেকে মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া,
চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ। মশারি, কয়েল, স্প্রে ব্যবহার করেও অনেক সময় মশা তাড়ানো যায় না।
তবে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি কিন্তু আছে,
যেগুলো কাজে লাগালে মশা আপনাকে এড়িয়ে চলবে। চলুন জেনে নিই সেগুলো।
১. লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার
একটা লেবু নিয়ে তা মাঝখানে খণ্ড করে কেটে
ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ পুরোটা গেঁথে দিন। শুধু লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে
থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। জানালার গ্রিলেও
রেখে দিতে পারেন। এতে মশার উপদ্রব কমে যাবে। কিছুদিন পর পর লেবু বদলে নিন, এতে করে
আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. তুলসী গাছ
তুলসী গাছ ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। শুধু রোগজীবাণুই
নয়, মশাকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে এটি। আপনার বাড়ির টবে কয়েকটি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখুন।
মশা কমবে।
৩. পুদিনার ব্যবহার
জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা
মতে, তুলসির মতো পুদিনা পাতাও মশাকে দূরে রাখতে সক্ষম। শুধু মশাই নয়, পুদিনার গন্ধ
অনেক ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে
৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন পরপর পানি বদলে দেবেন। এ ছাড়া, পুদিনা
পাতা ছেঁচে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। দেখবেন ঘরের
সব মশা পালিয়ে গেছে। চাইলে পুদিনার তেলও মাখতে পারেন।
৪. কর্পূর
মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কর্পূর হতে
পারে কার্যকর সমাধান। কর্পূরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। যে কোনো ওষুধের
দোকান বা মুদি দোকান থেকে কর্পূরের ট্যাবলেট কিংবা গুঁড়া এনে পানি দিয়ে পূর্ণ ছোট পাত্রতে
রেখে দিন। এরপর পাত্রটি ঘরের এক কোণে রেখে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন মশা কমতে
শুরু করেছে। ২ দিন পর পর পাত্রের পানি বদলে নতুন পানি রাখবেন। পাত্রে রাখা আগের পানি
ফেলে না দিয়ে এটি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পিঁপড়ার উপদ্রবও কমে যাবে।
আরও পড়ুন : গরমে ত্বক ও শরীরের যত্নে তরমুজ
৫. নিমের তেল
নিমের ঔষধি গুণাগুণের কথা সবাই জানে। নিমের
তেল ত্বকের জন্য উপকারী। এ ছাড়া এই তেলের রয়েছে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ। এই শীতে মশার
কামড় থেকে বাঁচতে নিমের তেল ও নারিকেল তেল সমপরিমাণ মিশিয়ে হাত-পায়ের চামড়ায় লাগিয়ে
রাখতে পারবেন। এটি মশাকে আপনার থেকে দূরে রাখবে।
৬. চা পাতা
মশা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো চা
পাতা পোড়ানো। চা পাতা কমবেশি সবার ঘরেই থাকে। আপনার ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে তা
ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো চা পাতা পোড়ানোর ধোঁয়ায় ঘরের মশা-মাছি পালিয়ে যাবে।
৭. রঙিন কাপড় পরবেন না
কিছু প্রজাতির মশা আছে যারা রঙিন কাপড়
বিশেষ করে কালো, লাল, নীল এসব রঙে আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাই মশার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে
তাদের পছন্দের রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন।
৮. সুগন্ধি ব্যবহার
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, পারফিউম
কিংবা লোশন মাখলে মশা আপনার কাছে কম যাবে। কারণ মশারা সুগন্ধি পছন্দ করে না।