মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে একটি রাস্তার অভাবে ৮ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। সদরের চরাঞ্চল মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর মানুষ পায়ে হেটে জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করছে। তাছাড়া মালপত্র আনা-নেওয়া করতে জমির উপরই চলছে অটোরিকশা-ভ্যান।
অথচ ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি থেকে আধারা ইউনিয়নের আধারা গ্রাম পর্যন্ত ৪০০ মিটার একটি রাস্তা নির্মাণ হলেই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে পারতো গ্রামগুলোর ২৫ সহস্রাধিক জনগোষ্ঠী।
গ্রামগুলো হচ্ছে মুন্সীকান্দি, উত্তর বেহেরকান্দি, দক্ষিণ বেহেরকান্দি, আনন্দপুর, নোয়াদ্দা, ঢালীকান্দি, বেশনাল ও মোল্লাবাড়ি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি শুস্ক মৌসুমে ফসলি জমির উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে মানুষজন যাতায়াত করছেন। স্থানীয়রা গৃহস্থলির প্রয়োজনীয় মালামাল মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রচন্ড রোদে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের গ্রাম গুলোর মানুষ। অনেকে জমির উপর দিয়েই অটোরিকা ও ভ্যান গাড়িতে করে মালপত্র আনা-নেওয়া করছেন।
আর ওই গ্রাম গুলোর বাসিন্দারা জমির উপরের ওই রাস্তা পথেই পার্শ্ববর্তী আধারা ইউনিয়নের আধারা, নয়াকান্দি, ডুপসা, সবুরাকান্দি ও চিতলিয়া গ্রামে যাতায়াত করছেন।
এদিকে, শুস্ক মৌসুমে জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করলেও বর্ষা মৌসুমে পড়েন বিপাকে। বর্ষায় জমি পানির নীচে তলিয়ে গেলে সদরের পার্শ্ববর্তী টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পুরা বাজার হয়ে ৬-৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়।
আরও পড়ুন>> পাটকেলঘাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ শ্রমিক নিহত
মুন্সীকান্দি গ্রামের তোজাম্মেল হক মিয়া বলেন, আমাদের যাতাযাতের রাস্তা নেই। ইউনিয়ন কার্যালয়ে যেতে হলে আলদী ও পুরা গ্রাম ঘুরে যেতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
একই গ্রামের আজিজুল মাদবর বলেন, আমার ছেলেরা সবাই শহরে থাকে। রাস্তা না থাকায় কেউ গ্রামে আসতে চায় না। এখন বাধ্য হয়ে আমি গ্রাম ছেড়ে মালামাল নিয়ে শহরের দিকে চলে যাচ্ছি।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ডলি বেগম বলেন, ছোট্ট একটা রাস্তার অভাবে আমি নিজেও প্রতিদিন ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করছি। এতে আমারও প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় ও খরচ-দুই-ই লাগছে।
আমাদের ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অন্তত ৮ গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বিষয়টি আমাদের চেয়ারম্যান, আধারা ইউপির চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলার কর্মকর্তারাও জানেন। আমারও দাবি মুন্সীকান্দি থেকে আধারা গ্রাম পর্যন্ত একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হউক।
মোল্লাকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও বাজারে যাতায়াত করা ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিপণ্য সদরে নেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজের জন্য এখানে নতুন রাস্তা করা দরকার। মুন্সীকান্দি থেকে আধার গ্রাম পর্যন্ত মাত্র ৪০০ মিটার একটি রাস্তা নির্মাণ করা হলেই ইউনিয়নের পৃথক ৩ টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত সহজ হয়ে যেতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা এবারই রাস্তার কাজ শুরু করতে চেয়ে ছিলাম। অধিকাংশ জমির মালিক রাস্তার জন্য জায়গা দিতে প্রস্তুত ছিল। দুই চারেক জন মানুষ এখান দিয়ে রাস্তা করার বিরোধীতা করছে। তাই এখানে রাস্তাটি হচ্ছে না। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনের রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহমেদ রেজা আল মামুন বলেন, শুনেছিলাম সংসদ সদস্য মহদোয়ের বরাদ্দের মাধ্যেমে ওই রাস্তাটি হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত লিখিত পাইনি।
তিনি আরও বলেন, রাস্তা হলে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষের খুব বেশি প্রয়োজন। তবে রাস্তার জায়গা আধারা ইউনিয়নের মানুষের। ওইখানে বেশকিছু মানুষ রাস্তা জায়গা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে ভেতরের দ্বন্দের কারণে কয়েকজন রাস্তার জায়গা দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এ কারণে সেখানে রাস্তার কাজ হচ্ছে না। সবাই একমত হলে কাজ করা হবে।