বছরের এই সময়ে সমুদ্র অনেকটাই থাকে শান্ত। সূর্যের মিষ্টি আলো দিনভর আনন্দ দেয়। সৈকতের ধারে মৃদু ঠাণ্ডার রাতগুলো দেয় অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সবমিলিয়ে এ সময়টাতে সেন্টমার্টিন নিঃসন্দেহে আদর্শ গন্তব্য। প্রবাল এবং সুন্দর বালুকাময় সমুদ্রসৈকত, তাজা নীল জলরাশির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবাক করে দেবে ভ্রমণপিপাসুদের।
বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন রুটে সাধারণত সরকারি অনুমোদন নিয়ে জাহাজ পরিচালনা করা হয়। এই সময়ে কক্সবাজার থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে টেকনাফ রুটটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এই মৌসুমে অনেক লোক সেন্টমার্টিন-এ ভ্রমণ করে তাই সম্ভাবনা বেশি যে আপনি আপনার পছন্দসই হোটেল পেতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন। ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে হোটেল-রিসোর্টগুলো আগে থেকেই বুকিং করে রাখা ভালো।
সেন্টমার্টিনে জাহাজ থেকে নেমেই আপনি ছোট বাজারের মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ হাঁটা পথ দেখতে পাবেন। কিছুটা এগিয়ে গেলেই গভীর নীল সমুদ্রের সাক্ষী হবেন। সাগরের বাতাস স্পর্শ করলেই আপনার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। সেন্টমার্টিনে থাকাকালীন অনেক কিছুই আছে, যা উপভোগ্য। আপনার ভ্রমণকে করবে মোহনীয়। এসব উপভোগের সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা উচিত না। সেই বিষয়গুলোই এই লেখায় তুলে ধরছি।
১. সাইকেল নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ঘোরাঘুরি : সেন্টমার্টিনের সকালটা থাকে খুব মনোরম। সকালের দৃশ্য উপভোগের সময় সমুদ্র সৈকতে সাইকেল চালাতে পারেন। বাজার এলাকা থেকে প্রতি ঘণ্টায় সাইকেল ভাড়া নিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, সাইকেল নেওয়ার সময় সাইকেল মালিক সময়টা সঠিক লিখেছেন কি-না। সাধারণত প্রতি ঘণ্টা ভাড়া আনুমানিক ৬০-১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। রাইড শেষ করার পরে সাইকেলটি দোকানে ফেরত দিতে ভুলবেন না।
২. বার বি কিউ পার্টি : সেন্টমার্টিনে থাকাকালীন সন্ধ্যেটা উপভোগ্য করে তুলতে চাইলে বার বি কিউ পার্টি হতে পারে অন্যরকম সুন্দর। দ্বীপটি রেস্টুরেন্ট দিয়ে ঘেরা। এসব খাবারের দোকান থেকে সামুদ্রিক মাছ কিনে নিতে পারেন। ওয়াটার পমফ্রেট, টুনা, স্যামন, গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া এবং আরও অনেক ধরনের মাছ রয়েছে। যেটা আপনার পছন্দ হয়, কিনে নিতে পারবেন।
৩. ভ্যানে ঘোরা : দ্বীপটি এতই ছোট যে সেখানে খুব কম পরিবহনের বিকল্প পাওয়া যায়। এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে যেতে স্থানীয়রা বেশিরভাগই হাঁটা পছন্দ করেন। তবে হাঁটতে ভালো না লাগলে আপনি ভ্যান ভাড়া করতে পারেন। চার থেকে পাঁচজন ভ্যানে চড়ে দ্বীপের চারপাশটা দেখে আসতে পারেন।
৪. রোমাঞ্চকর চাঁদের আলো উপভোগ : আপনার সফরের তারিখগুলো যদি জ্যোৎস্নার সঙ্গে মেলে, তাহলে আপনি চাঁদের আলোর নিচে সবচেয়ে মোহনীয় অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। চাঁদের আলো সবকিছুকে আরও একটু জীবন্ত করে তোলে। সেন্টমার্টিনে পূর্ণিমার সৌন্দর্য এমন একটি বিষয়, যা আপনি সেখানে পর্যবেক্ষণ করতে না যাওয়া পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না।
৫. সমুদ্র সৈকতে একটি রাত : যদি আপনি চাঁদনী রাতের অভিজ্ঞতার সুযোগটি হাতছাড়া করেন, সৈকতের পাশে একটি রাত- আপনার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেন্টমার্টিনে বিদ্যুৎ না থাকায়, নারকেল গাছের মৃদু আওয়াজসহ রাতগুলো আপনাকে শান্তি দেবে ভীষণ। সমুদ্রের শান্ত শব্দ পুরো সফরটিকে সার্থক করে তুলতে যথেষ্ট।
৬. সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত : সেন্ট মার্টিন দ্বীপে, আপনাকে অবশ্যই সকালে উঠতে হবে। প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখাটা বাধ্যতামূলক। সূর্যোদয়ের সময় সকালের তাজা বাতাস বুক ভরে নিলে ঘুমের জন্য অনুশোচনা থাকবে না। অন্যদিকে, সূর্যাস্তও একইভাবে আকর্ষণীয়। সৈকতে দুর্দান্ত সব ছবি তোলার জন্য এটি উপযুক্ত সময়। এ সময়টাতে আকাশ রঙ পরিবর্তন করে এবং সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
৭. শুটকির জন্য যুদ্ধ : শুটকি মাছ উপকূলীয় মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। স্থানীয় দোকানদাররা পর্যটকদের কাছে বেশি দাম দাবি করে। তাই স্বস্তায় পেতে কেনাকাটা করার সময় দর কষাকষি করতে ভুলবেন না।
৮. ছেড়াদ্বীপ : ছেড়াদ্বীপ, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন থেকে এটি বিচ্ছিন্ন থাকে। ভাটার সময়, প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে সেখানে যাওয়া সম্ভব। তবে নৌকা এবং মোটরবোটেও সেখানে যেতে পারবেন। সেজন্য বাজারেই ঘাঁটে নৌকার মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে।