ইরানজুড়ে চলমান বিক্ষোভের অংশ নিয়ে এরই মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যুর পাশাপাশি গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে মারা গেছে অনেকে। এমনই এক কিশোরী হলো নিকা শাহকারামি। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তাকে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা এবং নিকার মা।
১৬ বছরের এই কিশোরী ছিলেন একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার ও সংগীতশিল্পী। বিক্ষোভ শুরুর পর নিকা এতে অংশ গ্রহণ করেন এবং নেতৃত্বও দেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে নিখোঁজ হন নিকা। পুলিশের কাছে বারবার আবেদন করলে ১০ দিন পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন দেখা যায়, তার নাক কেটে নেয়া হয়েছে এবং মাথায় অগণিত আঘাতের চিহ্ন। এই ঘটনায় চলমান বিপ্লব আরও ফুঁসে ওঠে। কিন্তু পুলিশের দাবি, নিকা মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না এবং সে পাঁচতলা ভবন থেকে নিজেই লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশের এই দাবি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেছে নিকার মা। তিনি মেয়ের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।
অন্যদিকে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। একই সঙ্গে ইরানে চলমান বিক্ষোভে অংশ না নেয়ায় পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহসার চাচাতো ভাই এরফান মোরতেজাই বলেছেন, আমাদের পরিবার ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা ইরানের বাইরে মানবাধিকার সংস্থা বা চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলি না এবং বাইরের বিশ্বের কাউকে মাহসার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বলি না। হুমকি দিয়েছে যে, ইরানে থাকা পরিবারের সদস্যরা যদি বিক্ষোভে জড়িত হন, তাদের হত্যা করা হতে পারে। আমি নিজেও ফোনে অনেক হুমকি পাচ্ছি। বলেছে, শহরে আমাকে দেখলে অপহরণ করে মেরে ফেলবে।
ইরান সরকার তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে মাহসা ও তার পরিবার কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত। মাহসার বাবা ও চাচা এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। মাহসার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মোরতেজাই বলেছিলেন, মাশা তার ২২ বছরের জীবনে কখনো ইরানের বাইরে পা রাখেনি। সে ছিল মিষ্টি একটি মেয়ে, যার জীবন বলতে ছিল সংগীত, ভ্রমণ, শিল্প সম্পর্কে চিন্তা; মাশা কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত ছিল না।
কুর্দি নারী মাশা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সঠিকভাবে হিজাব না পড়ার কারণে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। তার একদিন পরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। মাশাকে নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে মারধর করা হয়েছে। আর মাশা আমিনির মৃত্যুর পরই নারীর পোশাক স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে বিপুল পরিমাণ মানুষ হতাহতের পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস।