ভারত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা
অন্য যেকোনো বিশ্বকাপের তুলনায় বিধ্বংসী। প্রোটিয়াদের ব্যাটিং তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে
৪২৮ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে তারা দেয় ৪০০
রানের লক্ষ্য।
আজ বাংলাদেশের বিপক্ষেও তাদের সেই শক্তিমত্তার
জানান দিয়েছে প্রোটিয়ারা। তবে সাকিবদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮২ রানের স্কোর গড়ার
পেছনে কেবল বোলারদের দোষ দিলেই হবে না। এটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে মোস্তাফিজ, শরিফুল,
হাসান মাহমুদ, সাকিব, মিরাজ, নাসুম ও রিয়াদরা কিছুই পারেন না ।
কারণটা সবারই জানা। এবারের বিশ্বকাপে কুইন্টন
ডি কক, রিজা হেনড্রিকস, রসি ফন ডার ডুসেন, এইডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেন ও মার্কো
জানসেনরা অনেক ভালো ভালো বোলারের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন। তাদের বল মুড়িমুড়কির মত উড়িয়ে
মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেছেন। অনেক বাঘা বাঘা বোলার এবার প্রোটিয়া ব্যাটারদের ভয়ে কাঁপছেন।
বিশেষ করে টস জিতে আগে চাপমুক্ত হয়ে ব্যাট
করতে পারলে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠেন তারা। এ সময় তাদেরকে আটকে রাখা খুব কঠিন। এটি বাংলাদেশের
ভক্ত-সমর্থক সবারই জানা।
যে কারণেই বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের যে
অংশটা ক্রিকেট নিয়ে সচেতন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সবগুলো ম্যাচ মন দিয়ে দেখেছেন, তারা
সবাই মন খুলে চেয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক যেন টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন। তাতে প্রোটিয়াদের
উত্তাল উইলোবাজির আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
অপরদিকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত
ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৩৮ রানের হার বাংলাদেশকে আশার আলো দেখাচ্ছিল। ওই ম্যাচে ৪৩ ওভারে
৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান করে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২০৭ রানে অলআউট হয়ে
যায় প্রোটিয়ারা। সেদিনের প্রোটিয়াদের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিকেই আজ তাকিয়েছিলেন টাইগার
ভক্তরা।
কিন্তু সাকিবের টস হারার কারণে আশার বেলুন
চুপসে গেছে। যথারীতি চাপহীন অবস্থায় প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারও সেই ব্যাটিংতাণ্ডব
চালিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেও প্রোটিয়া ব্যাটাররা রানপাহাড় গড়েছেন।
এখন বাংলাদেশের বোলারদের কাকে দুষবেন?
কার বা কাদের ব্যর্থতা খুঁজে বেড়াবেন? সবাইকে তুলোধুনো করেছে প্রোটিয়া ব্যাটাররা।
তারপরও চুলছেড়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে,
বাংলাদেশের স্পিনারদের তুলনায় পেসারদের বিপক্ষে প্রোটিয়ারা ছিলেন অধিক স্বাচ্ছন্দ ও
সাবলীল।
পেসারদের অনায়াসে খেলেছেন তারা। উইকেটের
সামনে, পিছনে ও চারিদিকে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে রানের ফল্গুধারা বইয়ে দিয়েছেন।
স্পিনারদের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের মারের তোড় ছিল তুলনামূলক অনেক কম।
একটি ছোট পরিসংখ্যানই বিষয়টিকে স্পষ্ট
করে দেবে। তিন বাংলাদেশি পেসার মোস্তাফিজ (৯-০-৭৬-০), শরিফুল (৯-০-৭৬-১ ) আর হাসান
মাহমুদ (৬-০-৬৭-২) মিলে ২৪ ওভারে দিয়েছেন ২১৯ রান। ওভারপিছু যা দাঁড়ায় ৯.১২ রান করে।
সেখানে ৪ স্পিনার সাকিব (৯-০-৬৯-১), মিরাজ
(৯-০-৪৪-১), নাসুম (৫-০-২৭-০) ও মাহমুদউল্লাহর (৩-০-২০-০) ২৫ ওভারে উঠেছে ১৬০ রান।
ওভারপিছু রান তোলার মাত্রা ৬.১৫।
কাজেই পরিষ্কার বোঝা যায়, প্রোটিয়াদের
চার ও ছক্কা বর্ষণটা মূলত বয়ে গেছে বাংলাদেশের পেসারদের উপর দিয়ে। তার আরও একটি প্রমাণ,
দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ১০ ওভারে তুলেছে ১৪৪ রান। মানে ওভারপ্রতি ১৪ .৪ রান করেছে তারা।
ওই ১০ ওভারের ৯ ওভারই করেছেন তিন পেসার মোস্তাফিজ , শরিফুল ও হাসান মাহমুদ।
অধিনায়ক সাকিব ৪৩ নম্বর ওভারে এসেছিলেন
বোলিংয়ে। সেই ওভারে ২৩ রান দিয়ে বসেন টাইগার ক্যাপ্টেন। তারপর দুই স্পিনার মিরাজ এবং
নাসুমের কাউকেই বোলিংয়ে আনেননি সাকিব। যদিও প্রোটিয়াদের, বিশেষ করে ডি ককের দানবীয়
তাণ্ডবের মধ্যেও ২ স্পেলে নিয়ন্ত্রিত ও মিতব্যয়ী বোলিং করে ৯ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে এক
উইকেট শিকার করেছিলেন মিরাজ। আর বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ৫ ওভারে ২৭ রান খরচার পর তাকেও
আর ব্যবহার করেননি অধিনায়ক সাকিব।
তার মানে অফস্পিনার মিরাজ আর বাঁহাতি স্পিনার
নাসুমের ৬ ওভার বাকিই থেকে গেছে। অবশ্য টাইগার অধিনায়ক নিজেও ১০ ওভারের বোলিং কোটা
পূর্ণ করেননি। তারও ১ ওভার বাকি ছিল।
মোদ্দাকথা, পেসে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ
ও সাবলীল উইলোবাজিতে অভ্যস্ত প্রোটিয়ারা ‘স্লগ ওভারে’ পেস বল বেশি
খেলার সুযোগ পেয়ে পুরোটাই কাজে লাগিয়েছেন।
কুইন্টন ডি কক আর হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাটে
ভর করে শেষ ১০ ওভারে ১৪৪ রান তোলে প্রোটিয়ারা। শেষ ৯ ওভারে ৩ বাংলাদেশি পেসার মোস্তাফিজ
, শরিফুল ও হাসান মাহমুদকে ইচ্ছেমত মেরে তুলে নিয়েছেন ১২১ রান।