লোডশেডিংয়ের কারণে ঢাকায় ওয়াসার ১০টি জোনের
মধ্যে ৫টি জোনেই পানি সরবরাহে সংকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান। একই
সঙ্গে সংকট কাটাতে মানুষকে পানি কম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ান
বাজারের ওয়াসা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তাকসিম এ খান বলেন, ‘রানিং পানি ব্যবহার
করলে পানি অপচয় বেশি হয়। অর্থাৎ কেউ কল ছেড়ে দিয়ে গোসল করলে বা পানি ব্যবহার করলে পানি
অপচয় বেশি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কোনও পাত্রে প্রথমে পানি নিয়ে এরপর সেটা ব্যবহার করুন।
আর এই অতিরিক্ত গরমের সময় অনেকে পানি ছেড়ে অপেক্ষা করেন, কারণ অনেক সময় পানি গরম আসে।
দয়া করে এটা করবেন না। দয়া করে সবাই পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন। এছাড়া গরমের সময় একেকজন
২/৩ বার করে গোসল করেন, পানির বেশি ব্যবহার করেন, এটা আসলে ঠিক নয়। অনেকে পানি পাচ্ছেন
না, সেক্ষেত্রে আপনি একটু কম পানি ব্যবহার করলে সেটা অন্যজনের কাজে লাগতে পারে। আবার
পানি জমিয়ে রেখে দুইদিনের পানি তিনদিন ব্যবহার করুন। এতে করে যিনি পানি পাচ্ছেন না,
তিনিও কিছুটা পানি পাবেন।’
আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি আর যেন না বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
গত কয়েকদিন ধরে পানি সরবরাহে যেমন সমস্যা
ছিল, আজ থেকে তা অনেকটাই ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে। পানি না পেয়ে রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষের
সমস্যা হচ্ছে। এজন্য আমি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা এমন
সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদের পানি প্রোডাকশন আমরা করতে পারছি, কিন্তু এটা
সাপ্লাই দেওয়ার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাচ্ছি
না। ফলে আমাদের পাম্পগুলো বন্ধ থাকছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পানিতে প্রেসার দিয়ে সরবরাহ
করা যাচ্ছে না। পাম্পের ডিপ টিউবওয়েলগুলো বন্ধ থাকছে। ফলে পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের দিকগুলো আমরা হাড়ে হাড়ে
টের পাচ্ছি। সে কারণে তাপমাত্রা জনিত সমস্যা ও পানির সমস্যা আমাদের ফেস করতে হচ্ছে।
পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, অনেক এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না- প্রতিদিন এমন অসংখ্য
অভিযোগ আমাদের হেল্প লাইনে আসছে। পানি সরবরাহ করতে আমাদের ৪৮টি গাড়ি দিয়ে সার্বক্ষণিক
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক এলাকা আছে যেখানে সরু গলি, ফলে পানির গাড়িগুলো ঢুকতে পারছে
না। জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু জেনারেটরে বিদ্যুতের
মতো প্রেসার পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: সারাদেশে ৫০ লাখ গাছের চারা বিতরণ করবে ‘বনায়ন’
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চাহিদার
তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ওয়াসার। অন্যান্য সময় বা শীতকালে রাজধানীতে
দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার। কখন কখনও চাহিদা থাকে ২৩০/২৪০ কোটি লিটার।
কিন্তু গরমকাল এলে চাহিদার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ কোটি লিটারে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার
প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ২৬০
কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে ঢাকা ওয়াসা।
বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ৫টি পানি শোধনাগার
রয়েছে। তবে ৪টি শোধনাগার থেকে পানি পাচ্ছে সংস্থাটি। চলতি বছরে উপরি তলের পানির উৎপাদন
৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য পূরণ এখনও করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে
উপরি তলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করাব
পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে।