পপ গানের কিংবদন্তি
জন লেননের জন্মদিন আজ। তাঁর জন্ম ১৯৪০ সালের ৯ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লিভারপুলে। তিনি
ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, লেখক ও শান্তিকর্মী।
লেননের জন্মের
আগেই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা। তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন
চার্চিল তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব আর পরিকল্পনায় ঠেকিয়ে রেখেছেন হিটলারের জার্মান বাহিনীকে।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মা প্রধানমন্ত্রীর নামের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখেন
‘জন উইনস্টন
লেনন’।
তিনি জনপ্রিয়
ব্যান্ড দ্য বিটলসের প্রতিষ্ঠাতা। লেনন ও পল ম্যাককার্টনি যৌথভাবে বিটলস ও অন্যদের
জন্য গান লিখতেন যা বাণিজ্যিকভাবেও সফল ছিল। লেনন ও ম্যাককার্টনি ছিলেন একে অপরের পরিপূরক।
তাঁর নিজস্ব ক্যারিয়ারে লেনন ইমাজিন ও গিভ পিস এ চান্সের মতো অসংখ্য গানের জন্ম দিয়েছেন।
সব সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল শান্তিপ্রিয় লেননের। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে ইংল্যান্ডে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এ বিটলসের জর্জ হ্যারিসন ও রিঙ্গো স্টার অংশ নেন। কনসার্টে জন লেননের অংশ নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন>> বলিউড নির্মাতাদের মানসিকতা নিয়ে প্রিয়াঙ্কার ক্ষোভ
১৯৮০ সালের
৮ ডিসেম্বর নিজেরই এক ভক্ত মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় জন
লেননের। সেদিন বিকেলে স্টুডিওর পথে যাওয়ার সময় ভক্তরা ঘিরে ধরেছিলেন জন লেনন ও তাঁর
স্ত্রীকে। এক ভক্ত তখন জন লেননের নতুন অ্যালবাম ‘ডাবল ফ্যান্টাসি’ এগিয়ে দেন অটোগ্রাফের জন্য। জন লেননও আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাক্ষর দেন।
সেই ভক্তই ছিলেন ডেভিড চ্যাপম্যান, জন লেননের খুনি।
২৫ বছর বয়সী
চ্যাপম্যান টিনএজ থেকেই বিটলসের ভক্ত ছিলেন। কিন্তু খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম নিয়ে বেড়ে
ওঠা চ্যাপম্যানের জন লেননের একটি কথা পছন্দ হয়নি একদমই। ১৯৬৬ সালে জন লেনন বলেছিলেন,
‘আমরা
এখন যিশুর চেয়ে বেশি জনপ্রিয়।’
জন লেননের ওপর
চ্যাপম্যানের ক্রোধ বেড়ে যায়। জন লেননকে হত্যার জন্য হাওয়াই থেকে নিউইয়র্ক শহরে থাকা
শুরু করেন চ্যাপম্যান। সঙ্গে রাখা শুরু করেন একটি রিভলবার।
সেদিন রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে জন লেনন ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের লিমুজিন গাড়িতে চড়ে স্টুডিও থেকে বাসভবন ডাকোটায় ফেরেন। বিল্ডিংয়ের মূল ফটক পর্যন্ত কিছুটা পথ হেঁটে যান তাঁরা। এই সময়েই মার্ক চ্যাপম্যান তাঁর রিভলবার দিয়ে গুলি করেন জন লেলনের পিঠ বরাবর। ডাকোটার ফটকের সামনে ঢলে পড়ে যান লেনন।
আরও পড়ুন>> এবার শ্রদ্ধা কাপুরকে তলব করেছে ইডি
রুজভেল্ট হাসপাতালে
যখন জন লেননকে নিয়ে আসা হয়, তখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জন লেননের। ১০ মিনিট পরে
পালসও চলে যায়। তবুও আরও ২০ মিনিট ধরে তাঁকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান চিকিৎসকেরা।
রাত শেষ না
হতেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে লেননের মৃত্যুসংবাদ। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে বের
হয় ১০ হাজার মানুষের মৌন মিছিল। টরন্টো শহরে লেননের স্মৃতির উদ্দেশে মোমবাতি জ্বালান
৩৫ হাজার ভক্ত। সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত হয়ে পড়েন শোকবিহ্বল।
বিচারে চ্যাপম্যানকে
২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৮১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকার পর চ্যাপম্যান
এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটা সংশোধনাগারে বন্দী আছেন।