প্রেমের টানা বাংলাদেশে আসা ভারতীয় এক
তরুণের মৃত্যু হয়েছে। জাভেদ খান নামে ওই তরুণের বাড়ি ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে। অসুস্থ
হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার
(১২ অক্টোবর) ভোরে ঢাকায় নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরপরই তিনি মারা যান।
জানা গেছে, তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
তাদের পরিচয় হয়। এরপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এবার নিয়ে তিনবার বাংলাদেশে এসে প্রেমিকার
সঙ্গে দেখা করেছেন জাভেদ।
নিজেকে জাভেদের প্রেমিকা দাবি করে বরিশালের
ওই তরুণী জানান, ভারত থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে গত রবিবার (৯ অক্টোবর) সকালে বরিশাল
নগরীতে আসেন জাভেদ। এসে নগরীর কাটপট্টি এলাকার আবাসিক হোটেল এথেনার চারতলার ৪১০ নম্বর
কক্ষে ওঠেন। আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও তার সঙ্গে দেখা করেন। পরদিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত মেডিক্যালের
মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কার্ডিওলজি বিভাগে নেওয়া হয়।
আজ ভোরে ঢাকায় নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলে মারা যান।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শরাফাত হোসেন বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পরপরই
তার কয়েকটি পরীক্ষা কর হয়। বিশেষ করে জাভেদের হাত-পা ক্রমান্বয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।
তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এর আগেও তিনি আরেকবার হার্ট অ্যাটাক
করেছিলেন। তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শেষ পর্যায়ে আমরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ
দেই। সেই পরামর্শ মোতাবেক রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে
তুললে সেখানেই তিনি মারা যান।’
হোটেলের ম্যানেজার মো. মোনাওয়ার হাসান
মিলন বলেন, ‘৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় হোটেলের চারতলায় ৪১০ নং কক্ষে
ওঠেন জাভেদ খান। তিনি পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দেন। পরদিন ১০ অক্টোবর সকালে বুকের ব্যথায়
কাতরাতে থাকেন। এরপর তিনিই তার পরিচিত এক তরুণীকে খবর দেন। সে এসে তাকে বরিশাল জেনারেল
হাসপাতালে নিয়ে যান। বিকালে চেক আউট করে জাভেদের ব্যাগটি আমাদের কাছে রেখে তাকে পপুলার
ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ওই রাতে জাভেদের ব্যাগও নিয়ে যাওয়া
হয়। পরে শুনেছি, জাভেদ মারা গেছেন। এ বিষয়ে যত তথ্য আছে তা পুলিশ আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন।’
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত)
সগীর হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে
হিমাগারে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।’
পুলিশ কমিশনার এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন,
‘জাভেদের বুকে,
কিডনি ও গ্যাস্ট্রোলিভারে সমস্যা ছিল। তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি
নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
জাভেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কোনও অভিযোগ পাইনি। পুরো বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
ময়না তদন্তকারী ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের
প্রধান ডা. কেফায়েতুল হায়দার বলেন, ‘ভারতীয় যে নাগরিক
মারা গেছেন তার লাশের ময়নাতদন্তে একটি বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি। তার ভিসেরা রিপোর্ট
ও পূর্বের শারীরিক সমস্যার প্রতিবেদন পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা
করবো। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’