পদ্মা সেতু বাঙালির
ইতিহাসে একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এই সেতু বাঙালির জীবনের একটি বড়
অর্জন। এর সঙ্গে মিশে আছে ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান।
পদ্মা সেতু এখন আর বাঙালির কাছে স্বপ্ন নয়। সেতুটি এখন বাঙালির কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল
সোনালী অহংকার। এই সেতুই আবার বিশ্বকে জানান দিলো বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
খরস্রোতা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের সেতুটি।
আগামীকাল শনিবার
স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদির রোববার থেকে
যান চলাচল শুরু হবে এ সেতু দিয়ে। এজন্য সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা
দিয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-
* পদ্মা সেতুর
ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
* পদ্মা সেতুর
ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা
সম্পূর্ণ নিষেধ।
* তিন চাকা বিশিষ্ট
যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড
গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।
* গাড়ির বডির
চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর
ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না।
* সেতুর ওপরে
কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।
সেতুটি নিরাপত্তা
ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, প্রতিদিন
এই সেতু দিয়ে ৭৫ হাজার যানবাহন পার হতে পারবে। এই সেতুর উপকারভোগী হবেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
২১টি জেলার তিন কোটি মানুষ। সেতুটি দিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
জেলাগুলোতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রধান ১০টি মহাসড়কের
৯টিই ফেরি পারাপারের ভোগান্তিমুক্ত হবে (ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে
যাতায়াত বাদে)। দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত নিয়ে আসবে পদ্মা সেতু।
এ বিষয়ে সেতু
নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানিপ্রবাহের বিবেচনায়
বিশ্বে আমাজন নদীর পরই পদ্মার অবস্থান। মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে পাইল বসানো হয়েছে
এই সেতুর। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতু তৈরিতে এতো গভীরে পাইল বসানো হয়নি। যা বিশ্বে রেকর্ড।
পদ্মা সেতুর আরেকটি রেকর্ড হলো ভূমিকম্পের বিয়ারিং সংক্রান্ত রেকর্ড। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’র সক্ষমতা ১০
হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে
নয় মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুটি টিকে থাকতে পারবে।
১৯৭১ সালে ৩০
লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই স্বাধীনতার মহানায়ক
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির সবচেয়ে
বড় অর্জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজেদের অর্থনৈতিক
সক্ষমতা দেখানোর মতে দুঃসাধ্য কারও ছিল না। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় বাজেটের প্রকল্প
বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানোর সেই দুঃসাধ্য দেখালেন বঙ্গবন্ধুর
কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খরস্রোতা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে এখন উদ্বোধনের
অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের সেতুটি। এ প্রকল্পের সঙ্গে মিশে ছিল বাঙালির অস্তিত্ব, টিকে
থাকার সংগ্রাম।