বিশ্বকে নাড়া
দেওয়া শিল্প দুর্ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দশ বছর আজ। ২৪ এপ্রিল দেশের
পোশাকশিল্পের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন।
২০১৩ সালের
২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬
জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা
হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে।
বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এ শিল্প দুর্ঘটনা। দেশের ইতিহাসে কঠিন এ ট্র্যাজেডির দিনে প্রতিবছরই আহত শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা বিচারের দাবিতে ভিড় করেন ঘটনাস্থলে। বিলাপ করেন বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নির্মিত রানা প্লাজার স্মৃতিস্তম্ভের সামনে।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ধসের ৯ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ
দশম বার্ষিকীর
প্রাক্কালে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করেছেন স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের
নেতা-কর্মীরা। ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে রোববার সন্ধ্যায় এ কর্মসূচির
আয়োজন করা হয়। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শ্রমিকদের পরিবার
ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি
রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচির সময় আহত শ্রমিকরা চার দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা, রানা প্লাজা ধসের জন্য দায়ী সবার বিচারের ব্যবস্থা, দেশের শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকবান্ধব করা ও দেশের সব শিল্প খাতে আহত শ্রমিকদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও সরকারি ভাতার ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে দোষীদের শাস্তির দাবি রানা প্লাজায় নিহতের স্বজনদের
এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো দায়ীদের বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই। ভবন ধসে পড়ার পাঁচ দিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে মালিক সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভবন ধস ও প্রাণহানির
ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত
হত্যা মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন
মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে।
মামলার উল্লেখযোগ্য
আসামিরা হলেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা
বেগম, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন,
সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর
রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার
ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা
খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল
ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান
মো. আনিসুর রহমান।
২০১৬ সালের
১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।