রেলওয়েতে ‘অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগ বেশ পুরনো। এই অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মহিউদ্দিন রনি। ১১ দিন ধরে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার পরিবর্তনে গত ৭ জুলাই থেকে অবস্থান নিয়েছেন রনি। ঢাবির এই শিক্ষার্থী তুলে ধরছেন ছয় দফা দাবি। বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন তার ব্যতিক্রমী অবস্থান কর্মসূচি।
ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি বরিশালের ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি রনি ভ্রমণপিপাসু মানুষ। পছন্দ করেন দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে। আর ঘুরতে গিয়ে চড়েন ট্রেনে।
আর সেই ট্রেনেই ঘটনার সূত্রপাত ১৩ জুন। রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা টু রাজশাহীর টিকেট কাটার চেষ্টা করেন তিনি। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ থেকে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠানো হয়। কিন্তু পিন নাম্বার দিয়ে সেটা নিশ্চিত করার আগেই বিকাশ একাউন্ট থেকে টিকেটের মূল্য কাটা হয়।
ঘটনার পর রনি দ্রুত কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের সার্ভার রুমে অভিযোগ করেন। সেখান থেকে কারন হিসেবে বলা হয় সিস্টেমের কারণে এমন হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে রনিকে অভিযোগ করতে বলা হয়।
অথচ তখন তার চোখের সামনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার সিট আরেক গ্রাহকের কাছে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর।
এরপর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন রনি। ১৪ এবং ১৫ জুন দুবার অভিযোগ করেন তিনি। তবে, এখন পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কোনো শুনানির ডাক আসেনি।
রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনা এবং ভোগান্তির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিসহ ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন রনি। কিন্তু তৃতীয় দিন ৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দেন। ফলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি স্থগতি রেখে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান অবস্থান অব্যাহত রাখেন।
আজকের দর্পণকে রনি বলেন, ‘টিকেট, কালোবাজারি, অব্যবস্থাপনাসহ রেলওয়ের সবরকম অনিয়মের বিরুদ্ধে ১১ দিন যাবত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। যতোদিন দাবি পূরণ না হয়, আমি কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’
এদিকে রনির এ কর্মসূচি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রেলওয়ের অনিয়ম ও ভোগান্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ তার সাথে সংহতি প্রকাশ করছে।
রনি এর আগে ঢাবির মেডিকেল সেন্টারের নানা সমস্যা নিয়ে অনশন করেছিলেন। পরে ঢাবি ভিসি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন।
রনির ছয় দফা দাবিতে আছে—
১. সহজ.কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে অথবা সহজকে বয়কট করতে হবে।
২. টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ট্রেনের জনসাধারণের জানমালের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫.ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ট্রেনের সীট সংখ্যা বাড়ানো অথবা ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তার সঙ্গে সঠিক সেবার মান ও তথ্যের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।