পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মানুষের মিলনোৎসব হল রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রা হল পৃথিবীর একমাত্র উৎসব যেখানে ভগবান মন্দির থেকে বের হয়ে এসে রথে আরোহন করে নগর পরিক্রমা করেন। এই হল জগন্নাথদেবের মহিমা।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদের কল্যাণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জগতের নাথ জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব আজ সারা বিশ্বের পায় ১২৭টি দেশের সব বড় বড় শহরে সারা বৎসরব্যাপী হাজার হাজার বিদেশী ধর্মপ্রাণ নরনারীর অংশগ্রহণে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে এই বাংলার কৃষ্টি, প্রথা, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য সারা বিশ্বের প্রতি নগরাদি গ্রামে প্রচারিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার গর্ভভূমি এই দেশে ধর্মীয় উৎসবসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় সবার অংশগ্রহণের উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হওয়ার ফলশ্রূতিতে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও সর্বপ্রকার অশুভশক্তি শতবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেও বার বার দমিত হয়েছে। বর্তমান সরকার ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এর স্থলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার সংযোজন করেছেন।
সংখ্যালঘুদের উপর বার বার পরিকল্পিত হামলা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত মঠ-মন্দিরে হামলা, গুম হত্যা ও ধর্ষণ বেড়েছে। এসব গুপ্ত হত্যা করে দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকার যদি এসব হত্যকারীদের এবং মূল হোতাদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি প্রদান না করে তাহলে সুশাসন প্রতিষ্টায় দেশ অনেক দূর পিছিয়ে যাবে।
শনিবার (১৭ জুন) দুপুর ১টায় নন্দকানন ইসকন শ্রীশ্রী গৌর নিতাই আশ্রম সম্মোলন কক্ষে আন্তজার্তিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম আয়োজিত শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের ২৬তম রথযাত্রা‘২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম ইসকনের নন্দনকানন মন্দিরের অধ্যক্ষ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্ম প্রচারে অগ্রগামী সংগঠন ইসকনের বিভিন্ন মঠ, মন্দির ও ভক্তদের উপর হামলা বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এইসব ঘটনা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনাকালে ভক্তদের উপর হামলা করা হয় তা কি কোনো স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রাম ইসকন নেতৃবৃন্দ রথযাত্রা উৎসবের দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি ঘোষণা, সনাতন ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ বিলুপ্ত প্রায় মন্দির স্থাপনা, স্মৃতি স্থান ও তীর্থস্থান সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রসারের জন্য সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিত করা, নন্দনকাননস্থ রাধামাধব মন্দির ও লোকনাথ মন্দিরের অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে রূপদান করা, রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনগণের ভোগ্য খাদ্যবস্তু সমূহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করা, প্রত্যেক মঠ, মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি সমূহের নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানান।
এতে সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদার, চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশিষ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জল, নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, সুমন চৌধুরী। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকন ন্যাশনাল কমিটির সদস্য সর্বমঙ্গল গৌর দাস, সুবলসখা দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।
ইসকন নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও শান্তিকামী ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ এ দেশের সরকারের উপর আস্থাশীল। তাদের বিশ্বাস সরকার যেকোনো মুহূর্তে অপরাধীদের আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবেন এবং বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাংলাদেশে সকল ইসকন মন্দিরে নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ২০ জুন থেকে ২৮ জুন-২৩ পর্যন্ত নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির এবং ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে বিভাগীয় কেন্দ্রীয় ইসকনের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ইসকন আয়োজিত ২৬তম রথযাত্রা উৎসব আড়ম্বরভাবে উদযাপন করা হবে এবং ৭ দিনব্যাপী জে এম সেন হলে ভাগবদ সপ্তাহ পালন হবে। ২০জুন রথযাত্রায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞানুষ্ঠান, জগন্নাথদেবের মধ্যাহ্নকালীন ভোগারতি, ধর্ম মহাসম্মেলন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈদিক নাটক অনুষ্ঠিত হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় দেশী- বিদেশী অতিথিবৃন্দ, ইসকন মহারাজবৃন্দ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বিকাল ৩টায় মহাশোভাযাত্রা নন্দনকানস্থ শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে চেরাগি পাহাড়-আন্দরকিল্লা-বক্সিরহাট বিট- লালদিঘীর পাড়-কোতোয়ালীর মোড়-নিউ মার্কেট-আমতলা-বোস ব্রাদার্স-নন্দনকানন শ্রীশ্রী গৌর নিতাই আশ্রম এসে সমাপ্ত হবে। সর্বোপরি উক্ত রথযাত্রায় কঠোর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।