কর্মীদের কর্মকাণ্ডে
বিতর্কের মুখে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে সংগঠনটি।
সেই সঙ্গে দায়ীদের নাম উল্লেখ করে স্থায়ী বহিষ্কারের কথাও জানানো হয়েছে।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)
মধ্যরাতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য
স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির
তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক।
ছাত্রলীগের প্রেস
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো
যাচ্ছে যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার
সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও
উল্লেখ করা হয়েছে, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত
প্রমাণের ভিত্তিতে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ,
জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা
পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম
বিন্তি ও সাংগাঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী,
জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তারকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
এ ছাড়া ‘অধিকতার তদন্তের
মাধ্যমে এই বিশৃঙ্খলার সাথে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যারা জড়িত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলেও জানানো
হয় ছাত্রলীগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে
বের করে দিয়ে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে
ছাত্রলীগের একটি অংশ।
সন্ধ্যা সাড়ে
৬টার দিকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে
অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানোর মাধ্যমে তাকে ‘ক্যাম্পাস ছাড়া’ ঘোষণা করে ছাত্রলীগের এক অংশ। এর এক ঘণ্টা
পর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকে লেগুনায় করে ক্যাম্পাস থেকে
বের করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় প্রতিপক্ষ।এ ঘটনার পরে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের
বিরোধী অংশের নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেন।
ইডেন কলেজ শাখা
ছাত্রলীগের এই অংশে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোনালী আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, কল্পনা
বেগম, জেবুন্নাহার শিলা, সুমনা মিম, মিলি আক্তার, সাদিয়া জাহান সাথী, তানজিলা আক্তার,
তানজিলা মনি পরশ, মনিকা তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী, কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্নাসহ কয়েকজন।
আনন্দ মিছিলে
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একটি অংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান ও ইডেন
কলেজের মাটি ছাত্রলীগের ঘাঁটি বলে স্লোগান দেয়।
এর আগে শনিবার
(২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কোন্দলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি
তৈরি হয়। দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের অবস্থানে চলে পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগান। শিক্ষার্থীরা
অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা রাতে ইডেন কলেজের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক
রাজিয়া সুলতানার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে কলেজের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ও সাধারণ
সম্পাদকের গ্রুপের সঙ্গে সহ-সভাপতিসহ আরেকটি গ্রুপের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান
নেয়।
এ ঘটনার জেরে
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার
বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের
২৫ নেত্রী। সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধরের ঘটনায় তারা এই হুমকি দেন।
পরে রবিবার (২৫
সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস
প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। এ সময় তারা তাদের দাবি
মেনে নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে
২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই ২৫ নেত্রী কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী। তারা গতকালের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিও মানেন না
বলে জানান।
এ বিষয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, সিট-বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর এবং ব্যক্তিগত ছবিও তুলে রাখা হয়।