সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি:
সাভারে গত সাত বছরের মধ্যে এ বছর দেশীয় জাতের পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভারের পেঁপে চাষীরা। চাষীরা বলছেন গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় জাতের পেঁপের ফলন বেশি হয়েছে।
সভার কৃষি অফিস বলছে এ বছর কৃষি অফিস থেকে পেঁপে চাষীদের জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি গাছের গোড়ায় হাড়ের গুঁড়ো ব্যবহার করিয়েছে। অতিবৃষ্টি না হওয়ায় "হলদে মুজাইক" পোকার আক্রমণ হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকা বংশবিস্তার করতে পারেনি। তাই দেশীয় জাতের পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে প্রায় ১৯০ বিঘা বা ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষী রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯৫ বিঘা বা ১০হেক্টর জমিতে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ করেছেন এখানকার কৃষকরা।
দেশীয় জাতের পেঁপে গাছের রোগবালাই কম ও পরিচর্যা করা সহজ হওয়ায়, আস্তে আস্তে কৃষকরা দেশীয় জাতের পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন। ইতিমধ্যে গতবছরগুলোর তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায়, কৃষকরা আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছে,দেশীয় জাতের পেঁপে চাষে। এছাড়াও অর্গানিক পদ্ধতিতে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ হওয়ায় অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। তাই গ্রাহকদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে বলে জানায় চাষিরা।
সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের সাদাপুর গ্রামের, তৈয়বুর রহমানের ছেলে,হাবিবুর রহমান গত সাত বছর যাবত দেশীয় জাতের পেঁপের চাষ করছেন । স্কুল জীবন থেকেই দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ করছেন হাবিবুর। চার ভাই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হাবিবুর, তার বড় ভাইয়ের সাথে সর্বপ্রথম, ১০০ টি দেশীয় জাতের পেঁপে গাছের চারা লাগিয়ে শুরু করেন পেঁপে চাষ।
এখন হাবিবুরের রয়েছে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে এক হাজার পেঁপে গাছের বাগান। যেখান থেকে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেন এখন তিনি। প্রতি কেজি পাকা পেঁপে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সাভার উপজেলা রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলা হওয়ায়, ঢাকার পাইকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি এসে, পেঁপে সংগ্রহ করছে হাবিবুরের বাগান থেকে।
হাবিবুর বলছেন, গত সাত বছরের তুলনায়, এ বছর দেশীয় জাতের পেঁপের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে তার। এতে হিসাব করে তিনি দেখেছেন সকল খরচ বাদ দিয়ে, এবছর তার লাভের পরিমাণ আসবে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। যেখানে গত বছরগুলোতে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা সর্বোচ্চ লাভ করেছেন তিনি।
এবছর ফলন ভালো হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, বর্ষাকালের অনাবৃষ্টিতে পেঁপের চারা নষ্ট হয় বেশি, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ও বাগানে ভালো রুদ্র পাওয়ায় পেঁপের ফলন বেশি হয়েছে।
একই এলাকার নতুন পেঁপে চাষী রাশেদুল ইসলাম জানান কৃষক হাবিবুরকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এ বছর ২০০টি দেশীয় জাতের পেঁপের চারা দিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন। বাম্পার ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তার। তাই সামনের বছরে আরো দ্বিগুণ পেঁপের চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পেঁপে চাষী হাবিবুরকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই এলাকার এরকম আরো তিন থেকে চারজন যুবক প্রায় ৮ থেকে ৯ বিঘা জমিতে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ করছেন। তারা গত বছরের তুলনায় এ বছরের পেঁপের বাম্পার ফলনে সবাই খুশি। তাই আগামী বছরে আরো বেশি পরিমাণ জায়গা নিয়ে চাষ শুরু করবেন বলে জানায় এ সকল কৃষকরা।
সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাকসুদা কাজল বলেন, বনগাঁ ইউনিয়নের সদাপুর গোপের বাড়ি গ্রাম ও কাজীপাড়া মিলিয়ে ২০ হেক্টর জমিতে এ বছর পেঁপের চাষ হয়েছে। আগে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ বেশি হতো। তবে দেশীয় জাতের পেঁপের রোগ বালাই কম ও পরিচর্যা সহজ। এবং ক্রেতার চাহিদা থাকায় কৃষকরা দেশীয় জাতের পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এ বছর প্রায় দশ হেক্টর জমিতেই দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে সাদাপুর গোপেরবাড়ি গ্রামের হাবিবুর অনেক আগে থেকে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ করতেন। এবছর হাবিবুর দুই গাড়ি পেঁপের চারা এনেছিলেন জানি। সেখান থেকে কৃষক সুলতান এই জাতের চারা নিয়ে চাষ শুরু করে। কৃষক সুলতানকে এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে, ১০০ শতাংশ জমিতে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষের সকল খরচ দেয়া হয় । যার খরচ মুল্য মূল্য২০ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এছাড়াও ঐ গ্রামের বেশ কিছু চাষী, হাবিবুরের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক বেশি হয়েছে। কারণ এ বছর আমরা কৃষি অফিস থেকে পেঁপে চাষীদের জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি গাছের গোড়ায়, ৫০০ গ্রাম করে হাড়ের গুঁড়ো ব্যবহার করিয়েছি।
এছাড়াও অতিবৃষ্টি না হওয়ায় "হলদে মুজাইক" পোকার আক্রমণ হয়নি। এবং পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকা বংশবিস্তার করতে পারেনি। তাই দেশীয় জাতের পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে।
প্রতি বিঘা জমির ২৫০ থেকে ৩০০টি দেশীয় জাতের পেঁপে গাছ থেকে, একজন কৃষক বছরে প্রায় ০২ লক্ষ্য ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করে থাকেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবছর তার পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
জৈব সার ও অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় চাষীদের খরচ কম হয়, ফলন ভালো হয় এবং পেঁপের স্বাদ ও গুনাগুন বৃদ্ধি পায়। যে কারণে ক্রেতাকে দেশীয় জাতের পেঁপে বেশি আকৃষ্ট করে। এছাড়াও গরমে পেঁপের চাহিদা একটু বেশি থাকে।
সব মিলিয়ে এ বছর সাভারে দেশীয় জাতের পেঁপে চাষীরা, বাম্পার ফলন হওয়ায় অনেক খুশি।