চট্টগ্রামের সেবক কলোনিতে অগ্নিদগ্ধ তিন
বোনের কেউ আর বেঁচে নেই। কলোনির বাসিন্দা মিঠুন দাশের অগ্নিদগ্ধ তিন কন্যার সবাই মারা
গেছে। বুধবার (১২ জুলাই) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে
চিকিৎসাধীন হ্যাপি রাণীকে (৬) সর্বশেষ মৃত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাখশী রাণী দাশ গত ২৪ জুন মারা যায়। সারথী গত ৩০ জুন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। ৬ বছরের হ্যাপীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো সেবক কলোনি। পুরো কলোনি আজ সুনসান নীরবতা। শোকে বাকরুদ্ধ স্বজনরা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী কর্মী মিঠুন দাশ আরতি
দাশের চার মেয়ে, সারথী রাণী দাশ (১৭), সাখশী রাণী দাশ (১৩), হ্যাপি রাণী দাশ (৬) ও
আড়াই বছর বয়সী সুইটি রাণী দাশ। গত ২০ জুন সকালে মা-বাবা কর্মস্থলে চলে যায়। চার বোন
ছিল বাসায়। হঠাৎ বাসায় আগুন ধরে যায়।
আরও পড়ুন<< জানাজায় হাজির পাওনাদার, লাশ ফেলে সন্তানদের পলায়ন
সবার ছোট আড়াই বছর বয়সী বোনটির যাতে কোনো
ক্ষতি না হয়, তার শরীরের ওপর ‘মানবঢাল’ তৈরি করেন বড়
তিন বোন। আগুনে দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তিন সপ্তাহের মধ্যে
একে একে তিন বোনই মারা যায়।
মর্মান্তিক এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোতোয়ালি
থানা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা
এসআই শামসুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দগ্ধ ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের
সার্বিক চিত্র উদঘাটন করেন।
তিনি জানান, ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। মা-বাবা
ভোরে সড়ক ঝাড়ু দেওয়ার কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। মা বড় বোনদের বলে গিয়েছিলেন, ছোট মেয়ে
সুইটির ঘুম ভাঙলে তাকে যেন দুধ গরম করে দেওয়া হয়। মেজো বোন সাখশী সকালে গ্যাসের চুলায়
দুধ গরম করে ছোট বোনকে খাওয়াতে খাওয়াতে তার পাশে ঘুমিয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন<< ঝালকাঠি সড়কে কচুগাছ লাগিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ
তিনি বলেন, দুধের পাতিল চুলা থেকে নামিয়ে
রাখলেও চুলা বন্ধ করেনি সাখশী। ঘণ্টাখানেক
পর সারথী ঘুম থেকে উঠে দ্রুত ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর
সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়।
তখন সবার ছোট সুইটিকে বাঁচাতে বড় তিন বোন
তার শরীরের ওপর উপুড় হয়ে থাকেন। বাসার চালের সঙ্গে ছিল তাপ প্রতিরোধক রেক্সিন। আগুনে
সেগুলো গলে গলে পড়তে থাকে তাদের শরীরের ওপর। চিৎকারের শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন গিয়ে
দরজা ভেঙে তাদের চারজনকে উদ্ধার করেন।
এসআই শামসুল বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন- সারথী, সাখশী ও হ্যাপির শরীরের ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ
পুড়ে গিয়েছিল। তবে সুইটি অক্ষত ছিল, শুধু কানের কাছে সামান্য আঘাত পায়।