রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল রোববার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। এতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো– হাসপাতালে একাধিক অ্যানেসথেশিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া, রোগী ও তার আত্মীয়কে অ্যানেসথেশিয়া ও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি ভালোভাবে জানানো, হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা, সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা। এ নিয়ে শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেন আদালত।
এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে গতকাল আয়ানের বাবা শামীম আহমেদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শামীম আহমেদ শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে তিনি বলেন, হাইকোর্টের মাজার গেট থেকে হেঁটে শিশু একাডেমিতে যাওয়ার সময় ছয় থেকে সাতজন বাড্ডা থানায় ডাক্তারদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মামলা তুলে না নিলে অফিসে যাওয়ার সময় যে কোনো ধরনের ক্ষতি করবে বলে ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল ১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য তাকে মাঝেমধ্যে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দিতে হতো। অস্ত্রোপচারের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। তবে আয়ানের বাবা সামীম আহমেদ সমকালকে বলেন, তাঁর ছেলের হালকা ঠান্ডা ও সর্দির বিষয়ে দুই চিকিৎসক সবকিছুই জানতেন। তারা নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সব রিপোর্ট দেখার পর অস্ত্রোপচার করা হয়।
আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। পরে আদালত প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন এবং শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তা হবে হাইকোর্টের রায়ের পর। তিনি আরও বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নেই। আস্থাহীনতার কারণে মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করে দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। এ জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
গত ৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইউনাইটেড গ্রুপের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ পর্যন্ত কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি এ মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।