সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ওই বাজারের জাহাঙ্গীর শেখের হার্ডওয়ার, কালু মোলার তেলের দোকান, জব্বারের মুদি দোকান, এনায়েতের গ্যারেজ, তপন শাহার মিষ্টির দোকানসহ ৬টি দোকার ঘর ভাঙচুর করেন।
আসন্ন দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আ.লীগের সভাপতি একেএমএ
আউয়ালের ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাতিজা তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে পিরোজপুর সদর উপজেলার
বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুরসহ গুলি করে তাণ্ডব সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গছে।
হামলায় আওয়ামী
লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ৭-৮ নেতা-কর্মী
আহতসহ ৬টি দোকান ভাঙচুর ও একটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে।
রোববার
দুপুর দুইটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পিরোজপুর পৌর শহরসহ জেলার সদর উপজেলার পাঁচাপাড়া,
কদমতলা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
পিরোজপুর জেলা
যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু বলেন, বিকাল ৩টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি আউয়াল ছেলে আঃ রহিম ও ভাতিজা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান
খালেকের ছেলে তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে ৪০-৫০টি মোটর সাইকেল ও একটি মাইক্রো বাসে
করে তাদের ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে পৌর শহরের বসন্ত পুল এলাকার তার বাসায় সামনে গিয়ে
৫-৬ রাউন্ড গুলি করে ও অকথ্য ভাষায় গালাগলি করে। বাসার প্রধান গেইট বন্ধ থাকায় বাসার
ভিতরে ঢুকতে না পেরে গেটে লাথি ও ইট-পাটকেল মেরে চলে যায়।
জেলার সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ সিহাব উদ্দিন জানান, রোববার দুপুর আনুমানিক সোয়া দুইটার দিকে ৪০-৫০টি মোটর সাইকেলে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়ালের ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে কদমতলার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে তারা উপজেলার পাঁচপাড়া বাজারের দিকে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে কদমতলা বাজারের ৬ টি দোকান ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানান, ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি
একেএমএ আউয়ালের ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাতিজা তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে ৪০-৫০টি মোটর
সাইকেল ও একটি মাইক্রো বাসে করে তাদের ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে বাজারে মহড়া দেয়। এ সময়
তারা ৩ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে চলে যায়। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কদমতলা বাজারের
ব্যবসায়ী কালু মোল্লা জানান, দুপুরে কিছু সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ওই বাজারের জাহাঙ্গীর
শেখের হার্ডওয়ার, কালু মোলার তেলের দোকান, জব্বারের মুদি দোকান, এনায়েতের গ্যারেজ,
তপন শাহার মিষ্টির দোকানসহ ৬টি দোকার ঘর ভাঙচুর করেন।
জেলার সদর উপজেলা
ভাইস চেয়ারম্যান এসএম বায়েজিদ হোসেন বলেন, হামলাকারীরা শহরের বলাকা রোডের আমার বোনের
বাসায় হামলা করে।
এছাড়া জেলা
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সাবেক ভিপি শিকদার চাঁন এর বাসার সামনে গিয়ে গুলি করে। এ
সময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও হাতুরি ছিল।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইখতেখার মাহমুদ সজল জানান, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের দলীয় অফিস ও তার বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করে। এ সময় পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছাব্বির হোসাইনকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ সময় ছাব্বির হোসেনকে চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাকে সেখানে চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়াসহ হাসপাতালে ভাঙচুর করে।
হামলায় আহতদের
মধ্যে ৩ জনকে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।
আহত নাছিমা
বেগম (৩৮) জানান, তার স্বামীর অটো ভাঙচুর ও
মরধরসহ তাকেও মারধর করা হয়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও
টাকা নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে
নৌকার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
না পেয়ে মারমুখী ও বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়াল। সন্ত্রাসের
মাধ্যমে ভোটারদের মাঝে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে যে কোন মূল্যে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বেপরোয়া
হয়ে উঠেছেন তিনি ও তার পরিবার।
শ ম রেজাউল
করিম বলেন, আউয়ালের ভাই মজিবুর রহমান খালেকের ছেলে তানভীর মুজিব অভি আজ শতাধিক মোটরসাইকেলে
প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কদমতলা শিকদার মল্লিকে মহড়া দেয় এবং আমার নির্বাচনী কার্যালয়
ভাঙচুর করে। আমার কর্মীদের মারধর করে, আলামকাঠিতে আমার নির্বাচনী কার্যালয় নষ্ট করে
ফেলে। আমার সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান ফুলুর বাসায় গিয়ে সন্ত্রাসী
উপায়ে বেপরোভাবে গুলি করে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ সজলের কার্যালয়ে
ভাঙচুর করে তার বাসায় হামলা চালায়ে। পিরোজপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বায়জিদ হোসেনের
বোনের বাসায় বলাকা রোডে হামলা চালায় সন্ত্রাসী উপায়ে। জেলা আওয়ামী মৎস্য যুবলীগের আহবায়ক
সাবেক ছাত্রনেতা শিকদার মোহাম্মদ চাঁনের বাসায় শতাধিক মোটরসাইকেল এবং ক্যাডার নিয়ে সন্ত্রাসী
হামলা চালায়। তারা পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বিরকে শহরে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে
যখন করেছে। পিরোজপুর শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে আমার লোকজনদের
মারধর করছে, যা, শহরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হলে অবশ্যই প্রমাণিত হবে।
পিরোজপুরের শান্তি প্রিয় জনগণ সন্ত্রাসী হামলায় আতঙ্কিত। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার এর
দাবি জানাচ্ছি।
ইতোমধ্যে সামগ্রিক
ঘটনা লিখিতভাবে আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন, বরিশালের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের,
পিরোজপুরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ
জানিয়েছি।
তবে এ ব্যাপারে
স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়ালসহ অন্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া
সম্ভব হয়নি।
পিরোজপুর সদর
থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেনো অভিযোগ পাওয়া
যায়নি, তবে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের পুলিশি অভিযান চলছে। তাছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে
পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে
রয়েছে।
পুলিশ সুপার
মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতদের গ্রেফতারে
অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর-১
(নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও ইন্দুরকানী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মৎস্য
ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল মনোনয়ন
বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।