সিলেটের ওসমানীনগরে
কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত শেরপুর সেতুর নিচের আরসিসি ঢালাই খসে পড়ায় মারাত্মক ঝুঁকির
মধ্যে পড়েছে যান চলাচল। সেতুর ওপরের দিকের একাধিক স্থানেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায়
মঙ্গলবার দিনভর সেতুর একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে রাতে ঝুঁকিপূর্ণ
অংশ ঢালাই করে সাময়িকভাবে দু’পাশে
যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ফলে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সেতু দিয়ে যান চলাচল করছে।
তবে সেতুর ওপরের
অংশ সাময়িক শঙ্কামুক্ত হলেও সেতুর নিচ দিয়ে চলাচলের রাস্তা ঝুঁকির মধ্যেই থেকে গেছে।
এতে করে অন্তত ১০ গ্রামের মানুষকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে
স্থায়ীভাবে মেরামত করতে হলে অন্তত তিনদিন সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয়লেন প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা। এতে করে
ওই তিনদিনই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
যান চলাচল বন্ধ
না রাখার বিকল্প কোনো পথ না থাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা পরিকল্পনা করবেন বলে জানিয়েছে সওজ।
স্থানীয় সূত্রে
জানা যায়, গত সোমবার মধ্যরাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে সেতুর উত্তরপাড়ের দক্ষিণ অংশের নিচের
আরসিসি ঢালাই ভেঙে পড়া শুরু হয়। এ সময় ঢালাইয়ের একটি টুকরো গায়ে পড়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি
আহত হয়েছেন। আহত সুয়েব আহমদ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা
নিয়ে বাড়িতে আছেন।
খবর পেয়ে স্থানীয়
ইউপি চেয়ারম্যান, ওসমানীনগর থানার ওসি ও শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি সেতু পরিদর্শন করেন।
পরে বস্তা ও প্লাস্টিকের স্ট্যান্ড দিয়ে ভাঙা অংশসহ একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেন
সংশ্লিষ্টরা। পরে মঙ্গলবার রাতে সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ঢালাই করে সাময়িক মেরামত করা
হয়।
স্থানীয়রা জানান,
সেতুতে যখন যানবাহন চলাচল করে তখন কম্পনের সৃষ্টি হয়। পুরো সেতুই দুলতে থাকে। এতে ঝুঁকি
নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। একইভাবে সেতুর নিচ দিয়ে শেরপুর নতুন বাজার-লামা তাজপুর রাস্তা
দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন অন্তত ১০ গ্রামের বাসিন্দা।
শেরপুর সৈয়দপুর
গ্রামের আনোয়ার আলী বলেন, সোমবার রাতে তাজপুর-সৈয়দপুর রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে
শেরপুর সেতুর নিচে পৌঁছামাত্র হঠাৎ করে সেতুর নিচ থেকে ঢালাই ভেঙে মাটিতে পড়ে। এতে
অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। একজন ব্যক্তির ওপর ঢালাইয়ের টুকরো ভেঙে পড়ায় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত
হয়েছেন। এ অবস্থায় মানুষজন সেতুর নিচ দিয়ে খুবই আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছেন।
সাদিপুর ইউপি
চেয়ারম্যান সাহেদ আহমদ মুছা বলেন, সেতুর বেশকিছু অংশ ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে সোমবার রাতেই
ঘটনাস্থলে যাই। দ্রুত সেতু সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ
বিভাগের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, সেতুর নিচের অংশ থেকে আরসিসি ঢালাইয়ের
টুকরো ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে এটি সংস্কারের জন্য ঢাকা-সিলেট
ছয়লেন প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের জানানো হয়। ছয়লেন প্রকল্প থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়
সাময়িকভাবে সেতুটি সংস্কার করে দেওয়ার জন্য। মঙ্গলবার রাতে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ঢালাই
করে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছি। একইভাবে সেতুর নিচ থেকে যাতে আর ঢালাইয়ের টুকরো ধসে
না পড়ে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সেতুর নিচ দিয়ে যান চলাচলের পথ কিছুটা সীমিত
করা হয়েছে।
সওজের নির্বাহী
প্রকৌশলী আরও বলেন, স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে এ সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
এর আগেও একবার যান চলাচল বন্ধ রেখে কাজ করা হয়েছে। এবারও অন্তুত তিনদিন যান চলাচল বন্ধ
না রেখে এ কাজ করা যাবে না।
তবে বিষয়টি
যেহেতু ছয়লেন প্রকল্পের অধীনে, তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে বলতে পারবেন বলে জানান
তিনি।
ঢাকা-সিলেট
মহাসড়কের ছয়লেন প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতুটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে পরিদর্শন করবে। এরপর কীভাবে
কাজ করা যাবে তা জানানো হবে। তবে যান চলাচল বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই।
কবে থেকে কাজ
শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। আমাদের টিম পরিদর্শন করার
পর বলতে পারবে কবে কাজ শুরু হবে। তবে এ কাজে বেশি দেরি করা হবে না।