ট্রেনের আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু হলো। সোমবার সকাল থেকেই যাত্রী নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর থেকে। এখন পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে চট্টগ্রামের উদ্দেশে মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছেড়ে যায়।
এদিকে গত রোববারের দুর্ঘটনার কারণে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনে ঢোকার প্রবেশ পথেই বাঁশ দিয়ে বেরিকেড দেয়া হয়েছে। যাতে টিকিট ছাড়া কেউ ঢুকতে না পারে। প্রত্যেক যাত্রীকে আলাদাভাবে চেক করা হচ্ছে। যাদের টিকিট আছে, তাদের স্টেশনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা অন্যজনের টিকিটে নিজে ভ্রমণ করতে চান তাদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ সকাল থেকে টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, টিকিট থাকলেও অনেক সময় ট্রেনের মধ্যে জায়গা পাওয়া যায় না। তাই টিকিট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে ঢুকতে না দেয়াই ভালো। তবে যারা অন্যের টিকিটে নিজে যাত্রা করতে চান, এমন যাত্রীরা ভোগান্তিতেও পড়েছেন স্টেশনে এসে।
তাদের একজন আফরোজা আক্তার। যাবেন কিশোরগঞ্জে। ভাইয়ের এনআইডি দিয়ে টিকিট কাটায় তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। তাই আমার ভাই টিকিটটি কেটে দিয়েছেন। গ্রামে যাচ্ছি ঈদের ছুটিতে কিন্তু স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছি না টিকিটের বিড়ম্বনায়।’
এদিকে স্টেশনের সামনে টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) মো. সেলিম বলেন, ‘ঈদযাত্রায় টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনের মধ্যে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি রেলের নির্দেশনা পালন করার। যার টিকিট তাকেই ভ্রমণ করতে হবে।’
এদিকে যারা ৭ এপ্রিল টিকিট কেটেছিলেন তারাই আজ বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করছেন। প্রথমদিনের ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী উম্মে জান্নাত বলেন, ‘রেলের এবারকার সিস্টেমটা অন্যবারের চেয়ে একটু ভালো। অনলাইনে টিকিট কেটেছি ভোগান্তি এড়াতে বাচ্চাদের নিয়ে আগেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। প্রতিবারই রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন যেখানে দেরিতে ছাড়ে এবার নির্ধারিত সময় ছেড়ে যাচ্ছে এতে আমরা খুশি। এবার টিকিট কাটতেও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি, যেহেতু অনলাইনে টিকিট কেটেছি।’
ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন,‘সকাল থেকে ঈদ যাত্রা ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। যথাযথ চেকিং করে স্টেশনে ঢোকানো হচ্ছে যাত্রীদের। কোনো যাত্রীকে টিকিট ছাড়া যাত্রা করতে দেয়া হবে না। গতকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। কমলাপুর, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশনে এক্সেস কন্ট্রোল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যাত্রীদের ভোগান্তি হয়নি নির্বিঘ্নেই ঈদযাত্রা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালকের ঘটনায় শুধুমাত্র সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মহানগর প্রভাতী ট্রেনটা কিছুটা ডিলে হয়েছে। অন্যান্য সবগুলো ট্রেন ঠিক আছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক করার। আগামীকাল থেকে নতুন রেক দিয়ে সোনার বাংলা ট্রেন ছেড়ে যাবে। তবে আজকে যারা সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রী ছিল, তারা যদি যেতে চান তাদের আমরা মহানগর প্রভাতী ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর যারা যেতে চাচ্ছেন না, তাদের টিকিট ফেরত দেয়া হচ্ছে।’