বিশ্বব্যাপী
আবহাওয়া এবং জলবায়ুসম্পর্কিত দুর্যোগের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ। গত অর্ধ-শতাব্দীতে বিশ্বে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানিসম্পর্কিত
প্রায় ১২ হাজার প্রতিকূল ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। আর্থিক
ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের। তবে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থার সাফল্যে
তুলনামূলক প্রাণহানির সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের আবহাওয়া
সংস্থার পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে।—খবর এনবিসি নিউজ-এর
জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, খরার মতো বিরূপ আবহাওয়ার পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতা বাড়ছে। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা আরো উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে ডব্লিউএমও বলেছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি বেড়েছে। তবে উন্নত প্রাথমিক সতর্কতা এবং সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কারণে গত অর্ধশতাব্দীতে হতাহতের সংখ্যা কমেছে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামুনুল হক
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৭০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সংঘটিত দুর্যোগগুলোতে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের- ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে এসব দুর্যোগে প্রতি ১০টি প্রাণহানির ৯টিই ঘটেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তাছাড়া জিডিপি বিবেচনায় আর্থিক ধাক্কার প্রভাবও সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। ডব্লিউএমও মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলো কীভাবে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানিসম্পর্কিত বিপদের শিকার হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছে চলতি মাসে মিয়ানমার-বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা। তিনি বলেন, অতীতে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ উভয়েই (প্রাকৃতিক দুর্যোগে) হাজার হাজার এমনকি কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানির শিকার হয়েছে। তবে প্রাথমিক সতর্কতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য এই বিপর্যয়মূলক মৃত্যুর হার এখন ইতিহাস। আগাম সতর্কতা জীবন বাঁচায়। ডব্লিউএমওর মতে, বিশ্ব জুড়ে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোই প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির বড় কারণ।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোসফটকে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা
সংস্থাটির হিসাবে, গত অর্ধশতাব্দীতে আফ্রিকায় আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির সঙ্গে সম্পর্কিত ১ হাজার ৮০০টির বেশি দুর্যোগ এবং ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৫টি প্রাণহানি রেকর্ড করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছিল ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ইদাই। একই সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আঘাত হেনেছে প্রায় দেড় হাজার দুর্যোগ, ফলে ৬৬ হাজার ৯৫১ জন মারা গেছেন এবং ১৮৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী
এশিয়া ৩ হাজার
৬০০টিরও বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়, যাতে প্রাণ গেছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৩ জনের। অর্থনৈতিক
ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের। এ অঞ্চলে বেশির ভাগ ক্ষয়ক্ষতিই হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের
কারণে। দক্ষিণ আমেরিকায় মোট ৯৪৩টি বিপর্যয় ঘটেছে, যাতে মারা গেছেন ৫৮ হাজার ৪৮৪ জন।
অর্থনৈতিক ক্ষতি ১১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয়
অঞ্চলে ২ হাজার ১০০টির বেশি দুর্যোগে ৭৭ হাজার ৪৫৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির
পরিমাণ ছিল অন্তত ২ ট্রিলিয়ন ডলার। গত অর্ধশতাব্দীতে ইউরোপে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি বিপর্যয়
দেখা গেছে। এতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৯২ জন মারা গেছেন এবং ৫৬২ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক
ক্ষতি হয়েছে।