সার্টিফিকেট
জালিয়াত চক্রের মূলহোতা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী
এ কে এম শামসুজ্জামান যেসব সাংবাদিকের নাম বলেছেন সেসব সাংবাদিক চাইলে তার মুখোমুখি
হতে পারেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা)
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
শনিবার (১১
মে) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ডিবিপ্রধান।
মোহাম্মদ হারুন
অর রশীদ বলেন, আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের নাম বলেছেন এ
কে এম শামসুজ্জামান। সার্টিফিকেট জালিয়াতির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সাংবাদিক, দুদক কর্মকর্তা
ও বোর্ডের চেয়ারম্যানের আশপাশে থাকা দালাল শ্রেণির লোকদের মোটা অংকের অর্থ দিতেন তিনি।
ডিবিপ্রধান
বলেন, সাংবাদিকরা ডিবির শত্রু বা প্রতিপক্ষ নয়। আমরা অন্যায়ভাবে কোনো সাংবাদিকদের নাম
বলতে চাই না। শামসুজ্জামান গুটিকয়েক সাংবাদিকের নাম বলেছেন। কখন কোন সাংবাদিককে কোথায়
কত টাকা দিয়েছেন তা সবকিছু স্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি বলেন,
যেসব সাংবাদিকের নাম এসেছে তারা চাইলে শামসুজ্জামানের মুখোমুখি হতে পারেন অথবা ডিবির
মুখোমুখিও হতে পারেন। যদি তাদের (সাংবাদিকদের) স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ থাকে, তা উপস্থাপন
করতে পারেন। যাদের নাম এসেছে প্রয়োজন হলে আমরাও তাদের সঙ্গে কথা বলবো। সার্টিফিকেট
বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে
চিঠি পাঠাবো।
শামসুজ্জামানকে
জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে কি না জানতে চাইলে
ডিবিপ্রধান বলেন, ঈদের আগে যখন প্রথম রিমান্ডে ছিল তখন এক সাংবাদিক শামসুজ্জামানের
মোবাইলে ফোন করে বলেন, ঈদ চলে এসেছে টাকা কবে দেবেন? সেই মুহূর্তে শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হয়, তোমার কাছে সাংবাদিক টাকা চাইছে কেন? তখন শামসুজ্জামান আমাদের কাছে খোলামেলা
জানান, তার এ পদ ধরে রাখার জন্য তাকে অনেককে ম্যানেজ করতে হয়েছে। তাদের ম্যানেজ না
করলে এ পদ থেকে সরিয়ে দিতো।
রিমান্ডে থাকা
শামসুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিবির কাছে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারিগরি
শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও সংশ্লিষ্টদের সবকিছু জানানো হবে। এছাড়া বুয়েটের অভিজ্ঞদের সঙ্গে
নিয়ে কতগুলো সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরি করে তারা বিক্রি করেছেন সবগুলো বিষয় তদন্তে
চলবে।
ডিবিপ্রধান
বলেন, জালিয়াতির অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিন সদস্যদের
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উচ্চপর্যায়ের এ তদন্ত কমিটির কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ
ও ডিজিটাল তথ্য থাকার পরেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব করে। অভিযুক্ত শামসুজ্জামান
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চাকরিচ্যুত ফয়সালকে দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে সার্টিফিকেট ও
মার্কশিট তৈরি করছিল। জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বোর্ডের ওয়েবসাইটে তারা আপলোড করেন।
যা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে যাচাইয়ের জন্য বৈধ বলে ওয়েবসাইট থেকে প্রমাণ করতো।
তিনি বলেন,
দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের তিন সদস্যের একটি তদন্ত
কমিটি রয়েছে। দুদক সম্পর্কে শামসুজ্জামান যা বলেছেন যদি সেগুলো দুদক যাচাই-বাছাই করতে
চায় তবে তারা প্রয়োজন মনে করলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
দুদকের কর্মকর্তারা
কীভাবে জড়িত। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের চারপাশে
দালাল শ্রেণির লোক, শিক্ষা বিটের সাংবাদিক এবং দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যদি শামসুজ্জামানের
সঙ্গে থাকে তবে সে তার সার্টিফিকেট বাণিজ্য আরও বড় আকারে করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সে
ফয়সালকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসার ভেতর সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কারখানা গড়ে তুলেছিল।