আজঃ রবিবার ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম

সরকারের দেয়া দশটি মুরগী দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে বেবী আক্তারের

প্রকাশিত:শনিবার ০১ অক্টোবর ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ০১ অক্টোবর ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
Image

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি:

ঢাকার সাভারে অবস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর দেয়া দেশীয় জাতের দশটি মুরগি পালন করে, জীবনের মোড় ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ধামরাই উপজেলার শরিফবাগ ইউনিয়নের বেবি আক্তারের।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় সৃষ্টি 'মাল্টি কালার টেবিল চিকেন' উন্নত জাতের দেশীয় মুরগি পালন শুরু করে বেবি আক্তার। দেশে মহামারী করোনা দেখা দিলে, এই দশটি মুরগি দিয়েই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে তার।

বেবি আক্তার বলেন ২০১৯ সালে পার্শ্ববর্তী একটি খামার পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর রাজিয়া আপা। এ সময় আমি আপার কাছে আবদার করে বলি, আপনারা অনেককেই অনেক কিছু দিচ্ছেন আমাকেও কিছু দিন।

তার আবদার শুনে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফার্নিং সিস্টেম রিসার্চ ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান ডঃ রাজিয়া খাতুন তার বাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বেবি আক্তারের বাড়ির পরিস্থিতি দেখে, সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর মাধ্যমে ইমপ্রুভমেন্ট করা, দেশীয় উন্নত জাতের ১০ টি মুরগি ও কিছু মুরগির খাবার প্রদান করেন তাকে। যত্ন সহকারে আটটি মুরগি ও দুটি মোরগ লালন পালন করতে থাকেন বেবি আক্তার। এই মুরগির ডিম বিক্রি করে সঞ্চয় করেন কিছু টাকা। ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ ডিম বিক্রি করে জমানো ২৩০০ টাকা দিয়ে, নিজ বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন একটি চিপসের দোকান।

দোকান করার চিন্তা ও ইচ্ছে কেন হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে বেবি আক্তার বলেন, বাড়ির পাশেই নতুন একটি বড় মহিলা মাদ্রাসা চালু হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্রীদের কেনাকাটার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়, কোন কোন সময় ছোট মেয়েরা কান্না করত চিপস খাওয়ার জন্য, যা দেখে একদিন আমার মাথায় চিপসের দোকান দেয়ার বুদ্ধি আসে। তখন আমার ডিম বিক্রি করে জমানো তেইশ শত টাকা দিয়ে কিছু চিপস এনে বাড়ির বারান্দায় ঝুলিয়ে দেই। এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতে ২০২০ সালের করোনা মহামারীতে চলে যায় আমার স্বামীর চাকুরী। চাকুরী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরি স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে। বন্ধ হয়ে যায় ইনকামের সব রাস্তা।

তবে বন্ধ হয়নি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দেয়া সেই ১০টি মুরগির ডিম পাড়া। মুরগিগুলো বিশেষ উন্নত জাতের হওয়ায় প্রতিদিন নিয়মিত ডিম পেরেই যেত। সেই ডিম বিক্রি করে সাংসারিক খরচের পাশাপাশি অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে দোকানের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে থাকি। এভাবেই জানাচ্ছিলেন বেবি আক্তার, তার সংগ্রাম করা জীবনের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকার গল্পে ।

এখন তার বাড়িতে ছোট্ট একটি চিপস, চকলেটের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে মেয়েদের সকল প্রকার কসমেটিকস আইটেমসহ থ্রি পিসের একটি বড় দোকান। বর্তমানে তার এই ব্যবসায় আড়াই লক্ষ টাকার পুজি রয়েছে বলে জানান তিনি।

বেবি আক্তারের এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, আশেপাশের প্রতিবেশিসহ দূর-দূরান্তের নিয়মিত কাস্টমারদের আসা-যাওয়া রয়েছে তার দোকানে।

তার কাছে থ্রি পিস কিনতে আসা প্রতিবেশী আসমা জানান, বাজার মূল্যে আমরা ঘরের পাশ থেকে মেয়েদের যে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারি, এছাড়াও বেবি আপা টাকার স্বল্পতা থাকলে বাকিতে দিয়ে সহযোগিতাও করেন। বাচ্চাদের টুকিটাকি কেনাকাটার জন্য হাত বাড়ালেই বেবি আপার দোকানে পাওয়া যায় সব। এজন্য নিয়মিত বেবি আপার কাছ থেকেই কেনাকাটা করি।

বেবি আক্তার জানান, বন্ধের দিনগুলোতে একটু কম বেচাকেনা হলেও, অন্যান্য দিনে তিন থেকে চার হাজার এবং প্রতিমাসে সব মিলিয়ে ৮০ হাজার থেকে  ৯০ হাজার টাকার বিক্রি হয় দোকানে। এতে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে বলে জানান তিনি।

বেবি আক্তার আবেগ ভরা কন্ঠে বলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেয়া দশটি মুরগি থেকে আমার শুরু, এখন আমার ৪০ টির বেশি মুরগি আছে, দুইটি দোকান আছে এছাড়াও আমার ইনকাম দিয়ে আমি সংসার চালাতে পারি। আমার বড় ছেলে আল্লাহর রহমতে ১৩ পাড়া কোরআনের হাফেজ, আর ছোট ছেলে একটি কিন্ডারগার্ডেনে পড়ছে। দুই ছেলের পড়াশুনার খরচ আল্লাহর রহমতে আমিই চালাই। স্বামীর সিএনজি চালানো ইনকামের টাকা খরচ না করলেও হয় আমার।

আপনাদের দোয়ায়, আমার স্বামীর টাকা ও আমার ইনকামের টাকা জমিয়ে ১৪ লক্ষ টাকার জায়গা কিনেছি। দোয়া করবেন, ইচ্ছা আছে খুব তাড়াতাড়ি পাকা বাড়ির কাজে হাত দিবো।

বেবি আক্তারের কঠোর পরিশ্রম, ইচ্ছাশক্তি, ও কর্মদক্ষতা থাকায় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট তাকে বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচটি ফ্রী প্রশিক্ষণ করিয়েছে। এ সকল প্রশিক্ষণ করে তিনি এখন মুরগি ছাগলসহ গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা নিজেই দিতে পারেন। যে কারণে এলাকার মুরগি ছাগল ও গরু পালনকারী নারীরা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা নিতে ছুটে আসে বেবি আক্তারের কাছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় বেবি আক্তার ৪৪ জন নারী সদস্য নিয়ে শরীফবাগ ইউনিয়নে 'শরীফবাগ প্রযুক্তি পল্লী মহিলা সমবায় সমিতি' নামক একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি বর্তমানে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মাঠ সহকারী বোরহানউদ্দিন।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফার্নিং সিস্টেম রিসার্চ ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান ডঃ রাজিয়া খাতুন বলেন, ধামরাই উপজেলার শরীফবাগ ইউনিয়নে নিয়মিত পরিদর্শনে গেলে, বেবি আক্তার আমার কাছে কিছু একটা করে দেয়ার জন্য সহযোগিতা চায়। এ সময় আমি তার বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই তার ছোট্ট ছোট্ট দুটি ছেলে আছে এবং তার স্বামী তেমন কিছু করতেন না একজন শ্রমিক ছিলেন, কোনরকম জরাজীর্ণ অবস্থায় একটি ছোট রুমে থাকতেন তারা।

তখন তাকে আমরা ০৮টি মুরগি ও ০২টি মোরগ, সাথে মুরগির প্রোডাকশনে আসার আগ পর্যন্ত ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের জন্য মুরগির খাবার দেই।

আমাদের তিনটি নেটি চিকেন জাম প্লাজম আছে যেগুলোকে আমরা গবেষণা করে, আমাদের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওইয়ে, দেশি মুরগির সাথে সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর মাধ্যমে ইমপ্রুভমেন্ট করিয়েছি। যার ফলে এই জাতগুলো সাধারণ দেশি মুরগির তুলনায় বছরে অনেক ডিম দিয়ে থাকে। যেখানে সাধারণ মুরগি বছরে ৩০ থেকে ৪০ টি ডিম দেয়, সেখানে আমাদের ইমপ্রুভমেন্ট করা এই দেশি মুরগিগুলো ১৮০ থেকে ২৫০টি করে ডিম দিয়ে থাকে। এই উন্নত জাতের মুরগিগুলোই বেবি আক্তারকে দেয়া হয়েছিল। আপনারা জানেন সাধারণত দেশীয় মুরগির ডিম ৫৫ থেকে ৬০টাকা হালিতে বিক্রি হয়। সে ক্ষেত্রে খামারির লাভের পরিমাণ বেশি হয়। এভাবে যখন বেবি আক্তারকে দেয়া মুরগিগুলোর প্রোডাকশন শুরু হয়।

বেবি আক্তারের সফলতা দেখে গ্রামের অন্যান্য মেয়েরাও অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী হয়।  তখন তাদেরকে আমি একটি ৪৩ জনের সমিতি গঠন করে দেই। যেখানে প্রত্যেক সদস্যকে, পশু লালন-পালনে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এখন তারা প্রত্যেকেই ভ্যাকসিনেশন থেকে শুরু করে প্রাথমিক সব ধরনের চিকিৎসা নিজেরাই করতে পারেন। এবং গ্রামের অন্যান্য মহিলা খামারীদেরকেও এ কাজে সাহায্য করেন।

ডঃ রাজিয়া আরো বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মহোদয় কমিউনিটিতে যারা ক্ষুদ্র খামারি আছেন তাদের সহযোগিতায় এলডিডিপি ও এনএডিপি প্রোগ্রাম থেকে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

যার আওতায়, সরকারি সহযোগিতায় বেবি আক্তারদের সমিতিকে একটি ছাগলের খাদ্য (পিলেট-ফিট) তৈরির মেশিন কিনে দেয়া হবে। এতে করে ছাগলের খাদ্য বিক্রি করে সমিতির মেয়েদের একটি রেগুলার ইনকাম এর ব্যবস্থা হবে।

এভাবেই বেবি আক্তারের পরিশ্রম ও আগ্রহে তার নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি ওই গ্রামের অন্যান্য মেয়েদেরও উন্নতি হচ্ছে। যে কারণে আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।


আরও খবর



অতিরিক্ত গরমে বিশ্বে বছরে ১৯ হাজার শ্রমজীবীর মৃত্যু

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

অতিরিক্ত গরমে কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার ৯৭০ জন শ্রমজীবী মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সোমবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এনশিউরিং সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাট ওয়ার্ক ইন আ চেঞ্জিং ক্লাইমেট (জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা) শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। ৩৪০ কোটি শ্রমশক্তির মধ্যে ২৪০ কোটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শে আসছেন। অর্থাৎ, বৈশ্বিক শ্রমশক্তির ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শে আসছেন।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত গরমজনিত প্রায় সোয়া দুই কোটি পেশাগত দুর্ঘটনায় ২০ লাখের বেশি মানুষকে নানা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। কৃষি, নির্মাণ, পরিবহন খাতের মতো বাইরে কাজ করা কর্মীরা অতিরিক্ত গরমের কারণে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে পড়ছেন। তাঁরা হিটস্ট্রেস, হিটস্ট্রোক, হিটক্র্যাম্পস, র‍্যাশ, ত্বকে ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, শ্বাসজনিত অসুস্থতা, কিডনির রোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা নানা জটিলতায় পড়ছেন।

প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের আরও নানা কারণে কর্মক্ষেত্রসংক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ১৬০ কোটি মানুষ আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে পড়ে। এ কারণে ত্বক ক্যানসারে বছরে মৃত্যু হয় ১৮ হাজার ৯৬০ জনের। বাইরে বা রাস্তাঘাটে কাজ করা ১৬০ কোটি মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হয়। এর ফলে ৮ লাখ ৬০ হাজার কর্মীর মৃত্যু হয়। ৮৭ কোটির বেশি মানুষ কৃষিকাজ করেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা বিভিন্ন কীটনাশকের সংস্পর্শে আসেন। বছরে ৩ লাখের বেশি কর্মী কীটনাশকের বিষাক্ততার কারণে মারা যান। পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসবাহিত রোগের সংস্পর্শে এসে (ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ সৃষ্টিকারী) বছরে ১৫ হাজার কর্মী মারা যান। চরম আবহাওয়ায় ভূমির পরিবর্তন, খাদ্যসংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাবের মধ্যে কাজের নিশ্চয়তা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা শুরু হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চরম আবহাওয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, লাওসসহ অনেক অঞ্চলে গত বছরের এপ্রিলে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ তাপমাত্রা দেখা গেছে। এ ধরনের আবহাওয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চরম আবহাওয়ায় বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা, মাদকাসক্তি, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।

২০২০ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন বলা হয়, ২০০০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি কর্মী অতিরিক্ত তাপের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছেন। তাপমাত্রা ও শ্রমশক্তি বাড়ার কারণে এ সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে অতিরিক্ত তাপ, আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন, চরম আবহাওয়া, কর্মক্ষেত্রে বায়ুদূষণ, পরজীবী-ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসবাহিত রোগ এবং অ্যাগ্রোকেমিক্যাল (কৃষি খাতে ব্যবহার করা রাসায়নিক)এ ছয় ক্ষেত্রে কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত তাপের পাশাপাশি বন্যা, খরার মতো চরম আবহাওয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে হতাশা, উদ্বেগ, সব বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা, পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা মানসিক আঘাতজনিত দুশ্চিন্তা ও মাদকাসক্তি বাড়ছে। দুর্যোগের মধ্যে জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, জেলে, কৃষি ও নির্মাণশ্রমিকদের মধ্যেও নাজুক মানসিক অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা যা আছে, তা যথেষ্ট নয়। অনেক দেশ তাপ থেকে সৃষ্ট রোগকে পেশাগত রোগ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঝুঁকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীরা। ঝুঁকি থাকলেও আর্থিক কারণে তাঁরা অতিরিক্ত গরমের মধ্যেও কাজ করেন।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আইএলওর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ) দলের প্রধান মানাল আজি বলেন, এটা এখন স্পষ্ট যে জলবায়ু পরিবর্তন কর্মীদের উল্লেখযোগ্য হারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই ঝুঁকিগুলোর বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় নীতি গ্রহণ ও কার্যকলাপবিষয়ক যা যা করা হয়, তার মধ্যে অবশ্যই পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


আরও খবর



দুই জেলায় ঝড়ের পূর্বাভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এদিকে যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

দেশের পশ্চিমাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা (১-২) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।


আরও খবর
বৃষ্টির পর আসছে হিট ওয়েভ

শনিবার ১৮ মে ২০২৪




ঢাকার বিষাক্ত বাতাসে উচ্চমাত্রায় ক্যান্সারের উপাদান

প্রকাশিত:শনিবার ১১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১১ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

ঢাকার বাতাসে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী আর্সেনিক, সিসা ও ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে রয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি এবং ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারকারী শিল্প, কয়লাভিত্তিক ইটভাটা এবং যানবাহন এসব রাসায়নিক উপাদানের উচ্চ ঘনত্বের জন্য দায়ী। বিশ্বের ২৭টি স্থানের বাতাস নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়েছে।

এলিমেন্টাল ক্যারেক্টারাইজেশন অব অ্যাম্বিয়েন্ট পার্টিকুলেট ম্যাটার ফর এ গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউটেড মনিটরিং নেটওয়ার্ক: মেথডোলজি অ্যান্ড ইমপ্লিকেশনস নামে এই গবেষণাটি গত ১০ মার্চ এসিএস ইএস অ্যান্ড টি এয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় শহরের বাতাসে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন আরেকটি উপাদান কোবাল্টের উচ্চ মাত্রায় উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা-ই একমাত্র স্থান যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি মানদণ্ড ছাড়িয়েছে।

সারফেস পার্টিকুলেট ম্যাটার নেটওয়ার্ক বিশ্বের একমাত্র সংস্থা যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বাতাসে সূক্ষ্ম কণার ঘনত্ব পরিমাপের মাধ্যমে কোন কোন এলাকার বাতাসে রাসায়নিক উপাদানের ঘনত্ব বেশি তা শনাক্ত করে।

গবেষকরা বাতাসে ধূলিকণা, রাসায়নিক উপাদানের বিস্তার ও মানুষের স্বাস্থ্যে এসবের প্রভাব মূল্যায়ন করতে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করেন।

গবেষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। তিনি জানান, বাংলাদেশের পরিবেশে সীসার দূষণের কারণে বাতাসেও বিপজ্জনক মাত্রায় এর উপস্থিতি দেখা গেছে।

তিনি বলেন, একসময় বাতাসে সীসার ঘনত্ব অনেক বেশি ছিল। তারপরে এটি অনেক হ্রাস পায়। আমরা সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ন্যানোগ্রাম পেতাম। কিন্তু এখন আবার এক হাজারেরও বেশি ন্যানোগ্রাম পাওয়া যাচ্ছে।'

গবেষণায় ঢাকার বাতাসকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া যায়, এর পরেই রয়েছে ভারতের কানপুর, ভিয়েতনামের হ্যানয়, সিঙ্গাপুর, চীনের বেইজিং এবং তাইওয়ানের কাওসিউং।


আরও খবর



রিমান্ড শেষে কারাগারে মিল্টন সমাদ্দার

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

মানবপাচারের মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

চার দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আব্দুস ছালাম শিকদার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।


আরও খবর



শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত:বুধবার ০১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০১ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
রাজশাহী প্রতিনিধি

Image

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এরই প্রতিবাদে বুধবার (১ মে) বেলা ১১টায় রাজশাহী বাস টার্মিনাল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাজশাহী বাস টার্মিনালের সামনের প্রধান সড়ক বাস ও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। যানবাহন চলাচলেও দেওয়া হয় বাঁধা।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশা দিলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ উঠিয়ে নেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল আলম সাজু জানান, রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন। তার কাছে শ্রমিকদের পাওনা রয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি। তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শ্রমিকদের অর্থ ফেরত না দেওয়ায় প্রতিবাদস্বরূপ তারা আজকের এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।


আরও খবর