ক্রমশ আরো খারাপ দিকে যাচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট। গত আট বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার স্মরণকালের সব রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে বলে দাবি জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বৈশ্বিক জলবায়ু সংস্থার (ডব্লিউএমও)। সেদিকে ইঙ্গিত করে মিসরে চলমান কপ-২৭ সম্মেলনের প্রথম দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সবাইকে সতর্ক হওয়ার জোর আহ্বান জানান। পাকিস্তান থেকে পুয়ের্তো রিকো পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব এর মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ডব্লিউএমও-এর দাবি অনুযায়ী, শিল্পবিপ্লবপূর্ব সময়ের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ১৫ ডিগ্রি।
২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছরই তৈরি হচ্ছে ঊষ্ণতম বছরের নতুন রেকর্ড। কার্বন নিঃসরণ বাড়তে থাকায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ৩০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে। সমুদ্র পেয়েছে স্মরণকালের উষ্ণতম রূপ। বিপদসীমা অতিক্রম করছে বরফ গলন, বৃষ্টিপাত, অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ।
জলবায়ু সংস্থার প্রধান অধ্যাপক পেট্টেরি তালাস মনে করেন এর মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য উপকূলীয় ও অপেক্ষাকৃত নিচু দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে অনুযায়ী পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাত আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। গত চার বছর ধরে দেখা যাচ্ছে খরা। গত ৪০ বছরে এমন নজির দেখা যায়নি। অন্যদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তান সাক্ষি হয়েছে ১৭০০ মৃত্যু ও প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির।
দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে নজিরবিহীন সাইক্লোন, চীনে তাপপ্রবাহ ও খরার প্রাদুর্ভাব, প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ওঠা এবং ইউরোপীয় নদীগুলোর পানিপ্রবাহ কমে আসা পুরো বিশ্বের জন্য অশনিসংকেত। বৈশ্বিক জলবায়ু সংস্থার প্রধান সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান। নইলে সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছাবে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়।