কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দুধকুমার নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বাঁধ ও সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়।
শনিবার সকালে দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে তেলিয়ানীকুটি ও পানাতিটারীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ ছাড়া কচাকাটা থেকে আয়নালের ঘাটগামী পাকা সড়কের বিএসসি মোড় ও লুছনি এলাকায় ভেঙে গিয়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার বামনডাঙ্গার তেলিয়ানীকুটিতে প্রায় ১৫০ ফুট এবং রাত আড়াইটায় পানাতিটারীতে প্রায় ৪০০ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকছে দুধকুমারের পানি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। পাকারমাথা এলাকায় বাঁধের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোতে ঢুকছে পানি। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল পেরিয়ে বামনডাঙ্গার বড়মানি, পানাতিটারী, সর্দারের ভিটা, বানারভিটা, তেলিয়ানীরপাড়, তেলিয়ানীকুটি, ধনিটারী, অন্তাইপাড়, সেনপাড়া, পাটেশ্বরী, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ইসলামপুর, খামার নকুলা, হরিরপাঠ, খেলারভিটাসহ পৌরসভার পুর্ব সাঞ্জুয়ারভিটা এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। কিছু বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। তলিয়ে গেছে এসব এলাকায় অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক। আয়নালেরঘাট-কচাকাটা সড়কের বিএসসি মোড় ও লুছনিতে সড়ক ভেঙে পানি ঢুকছে গ্রামে। ভেসে গেছে অনেক পুকুর। এ ছাড়াও ডুবে গেছে দুধকুমার পুর্ব বিষ্ণুপুর, ফান্দের চর, বালাটারীসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল। তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে সেনপাড়া-বোয়ালেরডারা সড়কে গীড়াই নদীর ওপরের কাঠের সেতু।
স্থানীয় ওছমান গণি, আব্দুল হাই, সিরাজুল ইসলাম, হযরত আলীসহ অনেকে জানান, রাতে বাঁধ ভাঙার পরে হু হু করে পানি ঢুকে মুহূর্তেই চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। ভেসে যাচ্ছে পুকুর। দ্রুত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিরাপদে নেওয়ার আগেই বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে বাড়িঘরে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন তারা।
বামনডাঙ্গা ইউপি সদস্য আবেদ আলী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও দায়সারা কাজের কারণে বারবার দুর্ভোগে পড়তে হয়। এবারে যে জায়গাগুলোতে বাঁধ ভেঙেছে, প্রতিবছর একই জায়গায় ভাঙে। গত দুবছর ধরে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড এ দুই জায়গা মেরামতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে কিছু বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে দায়সারা কাজ করেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদ সারওয়ার জানান, বাঁধ সংস্কার করা হলেও ইতিমধ্যে দুটি জায়গায় দুধকুমারের চ্যানেল সরু হওয়ায় পানির চাপে ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকেছে।