![Image](https://cdn.ajkerdarpon.com/images/2ea588923a13e01418b2580f29a3bc36.jpeg)
পটুয়াখালীর বাউফলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মৎস্য, কৃষি, সড়ক, বিদ্যুৎ, বনজ ও গ্রামীণ অবকাঠামোগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারী হিসেব অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শ কোটি টাকা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার জানান, রেমালের প্রভাবে উপজেলা ৪ হাজার পুকুর, ৫০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ৭০ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা পানিতে ভেসে গেছে। অবকাঠামোসহ মোট ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস জানান, ২ হেক্টর আউশ বীজতলা ২.৫ হেক্টর তিল, কাচা মরিচ ৩ হেক্টর, শাকসবজি ৮০ হেক্টর,পান ২ হেক্টর, পেঁপে ২ হেক্টর, কলা ৩ হেক্টর ও ৩ হেক্টর জমির আমসহ মোট ৪ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান খান জানান, একটি ম্যানগ্রাপ, নার্সারিসহ ৬ লাখ ১৩ হাজার ৩শ চারা, রাস্তায় বাগানের ৮১ হাজার চারা ও ৪১ হাজার নার্সারি চারাসহ মোট ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮শ ৬৪ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ১৫ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮-১০ হাজার ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের ডিজিএম মজিবুর রহমান জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের ১৫টি খুটি ভেঙ্গে গেছে এবং ২শ পয়েন্টে তার ছিড়ে গেছে। এ ছাড়াও ২শর বেশি ইনসোলেটর বিনষ্ট হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস জানান, উপজেলায় ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধাপাকা ও টিনসেট ভবন সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। আংশিক বিধস্ত হয়েছে ১ হাজার ১শ ৩৪টি ভবন। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ধুলিয়া, চন্দ্রদ্বিপ ও নাজিরপুর ইউনিয়নে ৮ কিলোমিটার কাঁচা সড়কসহ মোট ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চন্দ্রদ্বিপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলকাস মোল্লা জানান, তেঁতুলিয়ার মধ্যবর্তী তার ইউনিয়নের ১৪ কিলোমিটার বেড়ি বাধের খানকা বাজার থেকে দক্ষিণে ছালাম হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার, দিয়ারা কচুয়া খেয়া ঘাট থেকে উত্তরে স্লুইজ গেট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার চর নিমদি খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার বেড়ি বাধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও চরব্যারেট ফারুক খানের বাড়ি থেকে পশ্চিমে সেকান্দার দর্জির বাড়ি পর্যন্ত একটি কাঁচা রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে।
বাউফল প্রকৌশলী মানিক হোসেন জানান, উপজেলায় মোট পাকা ও কাঁচা মিলিয়ে ১শ ৬৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সড়কগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করতে মোট ১শ ৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমেলে তেঁতুালিয়া নদীর তীরবর্তী কালাইয়া টু মমিনপুর জিসিআর সড়ক কাম বেড়ি বাধটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কের ৮টি পয়েন্টে ভেঙ্গে গেছে।
এ ছাড়াও রেমালের প্রভাবে চন্দ্রদ্বিপ, কালাইয়া, নাজিরপুর, কেশবপুর, ধুলিয়া, কাছিপাড়া, আদাবাড়িয়া, দাশপাড়া, বাউফল পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষের কাছে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছায়নি। বেড়িবাধের বাইরে এলাকাগুলোর পানি নেমে গেলে ভিতরের এলাকগুলোর পানি বেড় হতে না পারায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তিন হাজার পরিবারের মধ্যে ইতিমধ্যে সরকারি ভাবে শুকনো খাবার, ১০ কেজি করে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজসহ ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে আরও চাহিদা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান বলেন, ঝড়ের দিন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয়কৃত মানুষের মাঝে স্থানীয় এমপি আসম ফিরোজের নির্দেশে সুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়।
জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আসম ফিরোজ এমপি বলেন, বাউফল উপজেলা সাগর উপকূলীয় হওয়ায় এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার অধিক ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলায় এলাকায় যে ধরণের সাহায্যে প্রদান করবেন আশা করি আমার উপজেলায়ও একই ধরণের সাহায্য প্রদান করবেন। যাদের ঘর বিধস্ত হয়েছে তাদের মাঝে টিন বিতরণের জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায় ৯শ ব্যান্ডেল ঢেউটিন মওজুদ রয়েছে। সেখান থেকে অধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করা হবে।