যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ও স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে হুয়াওয়ের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি রুখতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
ফলে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হুয়াওয়ের ব্যবসা কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন অংশীদারদের কাছ থেকে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ব্যবসা ফেরাতে এবার বন্দরগুলোয় স্মার্ট টার্মিনাল নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্দর ও কারখানায় অটোমেশনে মনোযোগী চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিটি। হুয়াওয়ের এ স্মার্ট টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে বেইজিংয়ের পূর্বে তিয়ানজিন বন্দরে। এটি মূলত একটি ডাটা নেটওয়ার্ক। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। গাড়িসহ হুয়াওয়ে এখন শিল্পের সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের কর্মকাণ্ড বাড়াতে চাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের বিপরীতে তাদের এ ধরনের কার্যক্রমগুলো খানিকটা কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
এদিকে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি শিল্পে অটোমেশনে আগ্রহী। গাড়ি থেকে শুরু করে উৎপাদন খাতে তারা অটোমেশন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিতও করেছে। দেশটির বৃহত্সংখ্যক শ্রমশক্তিরই বয়স বেড়েছে। তাই অটোমেশনে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগ্রহী দেশটি। হুয়াওয়ের পরিচালকরা বলছেন, স্মার্ট টার্মিনাল তিয়ানজিনের ২০০ স্কয়ার কিলোমিটার (৭৭ বর্গমাইল) বন্দরের অংশ। এখানে ২০০ জন কর্মচারী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূলত ৮০০ জনের কাজ করতে সক্ষম।
হুয়াওয়ের বন্দরভিত্তিক ব্যবসায়িক ইউনিটের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ইউ কুন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি তিয়ানজিন বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর সমাধানটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি। এটি অন্যান্য বন্দরে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস লিমিটেড মূলত ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ব্যবসায়িক অবস্থান ধরে রাখতে রীতিমতো লড়াই করছিল। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, হুয়াওয়ে তাদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি। কেননা এটি চীনা গুপ্তচরবৃত্তির সুবিধার্থে বিদেশী ফোন নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ বারবার অস্বীকার করা হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর তাদের মিত্র রাষ্ট্র যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ তাদের ফোন নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করে। তাছাড়া হুয়াওয়ের ফোন থেকে গুগল মিউজিক, ম্যাপসহ অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চীনের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন বিক্রিতেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। নিষেধাজ্ঞা থেকে আলাদা করে বিক্রয় পুনরুজ্জীবিত করার আশায় ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এর ‘অনার’ ব্র্যান্ডটিকে পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় দুই লাখ কর্মীর প্রতিষ্ঠানটি চীন ও অন্যান্য বাজারে বিক্রয়ের ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্ক পরিষেবায় নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। শিল্প বিশ্লেষক পল বুড্ডে মনে করেন, ডাটা নেটওয়ার্ক ব্যবসায় হুয়াওয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও পাকা খেলোয়াড়। যাদের রয়েছে জ্ঞানের বিস্তৃত ভাণ্ডার। বিদেশের বাজারে স্মার্টফোন বিক্রিতে ধস নামার পর কারখানা, খনি, হাসপাতাল, বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য শিল্প গ্রাহকের দিকে মনোযোগ দিতে হুয়াওয়ে ২০টি আলাদা দল তৈরি করেছে। সংস্থাটি বলছে, তাদের অটো ইউনিটে কাজ করছে তিন হাজার লোক। এছাড়া ২০২০-২১ সালে তারা প্রযুক্তিতে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।