জলাবন্ধতা নিরসন মহাপরিকল্পনার নামে নগরবাসীকে কাঁচকলা দেখাচ্ছে সিডিএ। চাক্তাই ও রাজাখালীর খালের মোহনার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ৭১টি খাল উদ্ধার করা না হলে আইনানুগ পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন।
স্টর্ম ড্রেনেজ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ মাস্টার প্ল্যান এবং সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন (জেআর স্নেল, ১৯৬৯) এর ভিত্তিতে ৭১ খাল উদ্ধার এবং হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন চিহ্নিত মাছ বাজার ভেড়া মার্কেটসহ ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনা উন্মুক্ত করার দাবীতে নগরীর বহদ্দার হাটস্থ চাক্তাই খালের মোহনায় মানববন্ধনের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন।
মানবন্ধন সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, ১৯৬৯ এর স্ট্রোম ড্রেনেইজ এন্ড ফাল্ড কোনট্টোল মাস্টার প্ল্যান এন্ড ফেজিবিলিটি রিপোর্টে বট্টগ্রাম মহানগরীর কুমিরা স্টেশন থেকে কালুরঘাট ব্রিজের নিচ পর্যন্ত এলাকায় ৭১টি খাল চিহ্নিত করা আছে। উক্ত প্ল্যানে ৭১টি খালের দৈর্ঘ্য প্রস্ত গভীরতা পানি প্রবাহের সক্ষমতা নির্ধারণ করা আছে।
তারপরও সিডিএ সিটি কর্পোরেশন কি করে ৩৬ কিংবা ৫৭ খালের কথা বলে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়িত ৯৫২৬ কোটি টাকার জলাবন্ধতা নিরসন মহাপরিকল্পনা শুরুর আগে খালগুলোর প্রস্থ আর এস ম্যাপ অনুযায়ী না করে বিএস ম্যাপ অনুযায়ী খনন ও পাড় তৈরি করতে গিয়ে সেগুলো সরু হয়ে গেছে। যে কারণে পানি ধারণ ও প্রবাহের ক্ষমতা কমে গেছে। ২০০৯ সালে এডভোকেট মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে দায়েরকৃত মামলায় আরএস ম্যাপ অনুযায়ী নগরীর খাল উদ্ধার করতে নোটিশ বা মামলা করার প্রয়োজন নাই। যে কোন মুহুর্তে সিডিএ জেলা প্রশাসন নির্বাহী ক্ষমতা বলে তা উদ্ধার করতে পারে।
তিনি বলেন, এই মামলার আলোকে ঢাকার আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করা হয়েছে। আর এস ক্ষতিয়ান অনুযায়ী ৭১টি খাল উদ্ধার করা না হলে জোরদার আন্দোলন করা হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরীরবাসীকে কাচকলা দেখাচ্ছে। যে পরিকল্পনার সুফল নগরবাসী কিভাবে পাবে তার সুনির্দিষ্ট উত্তর সিডিএ দিতে পারছে না। ৯৫২৬ কোটি টাকার যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা শুরুর আগে কত মিলিলিটার বৃষ্টি হলে নগরীর কোথায় কি পরিমান পানি জমে। সংস্কারকৃত ৩৬টি খাল দিয়ে কি পরিমান পানি প্রবাহিত হতে পারবে এই বিষয়ে কোন গবেষণা নাই। কুমিরা থেকে কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে যে সমস্ত খাল মিলিত হয়েছে তার অধিকাংশ উজানে দখল এবং ভরাট হয়ে গেছে।
এতে আকবর শাহ, পাহাড়তলী খুলশী জালালাবাদ এলাকার সকল পানি নাসির খাল বির্জা খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই নম্বর গেইট শুলকবহর বহদ্দার হাট চকবাজার এলাকায় জমা হয়ে ব্যাপক জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়। মোহরা অনন্যা আবাসিক কালুরঘাট এলাকার পানি প্রবাহের একমাত্র কৃষ্ণখাল সিডিএ খননকৃত ৩৬ খালে নাই। খালটি সংস্কার না করার তা ভরাট হয়ে গেছে। সেই খালে ভরাট হওয়া আবর্জনার উপর দিয়ে বর্তমান মানুষ হাটাচলা করে। সেইসব এলাকায় বর্তমানে স্থায়ী জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, চাক্তাই রাজাখালী খালের মোহনা ভরাট করে ভেড়া মার্কেট ও মাছ বাজার গড়ে তোলায় উজান থেকে নদীর ভাটিতে মোহনা উচু হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি নদীতে যেতে বাধাগ্রস্থ হয়ে জলাবন্ধতার সৃষ্টি করে। দাবী অনুযায়ী আগামী ১৫দিনের মধ্যে কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও আর এস ম্যাপ অনুযায়ী একাত্তর খাল উদ্ধার ও খনন করা না হলে সিডিএ চসিক ও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামে মহাসচিব কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, মোহরা কৃষ্ণখাল রক্ষা কমিটির আহব্বায়ক খোরমেদ আলম প্রমুখ।