পাবনার ঈশ্বরদী থানার পৌর ৪নং ওয়ার্ডে
তিন তলা কলা বাগানে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকা জুয়া খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু
জুয়াড়ী এসে কর্তাদের ম্যানেজ করেই এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
৫নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ওয়াকিল আলম
বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে জুয়া খেলা চলছে প্রকাশ্যে। তরুণ সমাজ ও ব্যবসায়ীসহ বহু পরিবার
জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকায় চুর, ছিনতাইয়ের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের
প্রতি আমার আকুল আবেদন এই জুয়া ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির
ব্যবস্থা করা হোক।
সরেজমিন দেখা যায়, ঈশ্বরদী থানার ৪নং ওয়ার্ডের
তিনতলা কলা বাগান এলাকায় মাঠে তাবু টাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে চলছে জুয়ার আসর। এলাকার চিহ্নিত
জুয়াড়ী চক্রের চঞ্চলের নেতৃত্ব তিনতলা কলা বাগান মাঠে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত
পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাশ ও জুয়ার আসর। ওই জুয়ার আসরে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কুখ্যাত
জুয়াড়ীরা এসে সমাবেত হচ্ছে। দুর-দুরান্ত থেকে আসা জুয়াড়ীরা এখানে লাখ লাখ টাকার হাত
বদল করছে এবং প্রতিদিন এ চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই টাকা খুইয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব। অসাধু
কর্তাদের নিরবতায় থাকা একটি সংঘবদ্ধ চক্র মিলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালাচ্ছে নিষিদ্ধ
জুয়ার আসর। এ জুয়াকে কেন্দ্র করে স্পটে নেশা গ্রহণ সমান তালে চলায় জুয়া ও মাদকের মোহে
পড়ে অনেকে পথে বসছেন। চলমান জুয়া ও মাদকের আসর নিয়ে এ অঞ্চলের অভিভাবক ও তাদের পরিবার
উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা
বলেন, প্রতিদিন হাজার টাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলায় মেতে উঠেছে জুয়াড়ীরা। অনেকে
জুয়া খেলে শুন্য হাতে ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। জুয়ার ও নেশার টাকা জোগাড় করতে এলাকার উঠতি
বয়সের ছেলেরা চুরি, ডাকাতি পকেটমারাসহ নানারকম অপকর্মের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
এই জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার
আম বাগান পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে রক্তক্ষয় সংঘর্ষ বেজে যায় দুই জুয়ারী মাঝখানে পরবর্তীতে
পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে দুই পক্ষকেই শান্ত করেন।
জাবেদের স্ত্রী জানান, জুয়া খেলাকে কেন্দ্র
করে বিকালে তিন তালা মাঠে কথা কাটাকাটি হয় দুইজনের। পরে ওখানে দুজনই বিদেশী মদ পান
করে এলাকাতে এসে। ওই কথার রেস ধরে এই মারামারির সৃষ্টি হন। পুলিশ যদি সময় মত না আসতো
তাহলে দুজনার ভিতর একজন নির্ঘাত মারা যেত।
এই ব্যাপারে জানতে বিষয়টি পৌরসভার ৪নং
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম সঙ্গে মুঠোফোনে
কথা হলে তিনি বলেন, এটার একটি প্রতিকার চাই যেহেতু আমি এত বড় পরিসরের নেতাও না শুধুমাত্র
একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যারা আমাদের উপরে আছেন তাদের সহযোগিতা পেলে এই বিষয়ে অনেক
দিন ধরে আলোচনা করছি নিজেদের মধ্যে একজন মাদক ও জুয়া ব্যবসায়ী সে হয়তো লক্ষ লক্ষ
টাকার মালিক হচ্ছেন। এতে শত শত পরিবারের ছেলেরা ঝরে পড়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে যদি প্রশাসন
যদি এগিয়ে আসতো তাহলে মনে হয় একটা প্রতিকার করা সম্ভব হবে। আর এই যে জুয়ার আসরটাতে
লোকালে নেতাদের ছত্রছায়ায় কেউ বড় ভাই সেজে এই জুয়ার পরিচালনা করছে। তাদের কাছে
এই বিষয়ে প্রতিকার করতে গেলে তারা বলেন আমরা অমুক ভাইয়ের লোক এর জন্য এই বিষয়ে আমরা
তাদের সঙ্গে পেরে উঠছি না। আর কি বলবো তখন দায় ছাড়া ভাব দেখায় চলে আসে। এ ছাড়াও
আর কোন উপায় থাকে না।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইছাহক আলী
মালিথা জানান, আমি নিজে জুয়া বন্ধে চেষ্টা করেছি। থানা পুলিশকে জানিয়েছি। বিষয়টি পুলিশ
নলেজে আছে। এখানে ঈশ্বরদী থানা এলাকাসহ লালপুর ও পাবনা জেলার তরুণ সমাজ ও ব্যবসায়ীসহ
বহু পরিবার জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের আতঙ্ক সৃষ্টি
হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল
ইসলাম জানান, জুয়া খেলার বিষয়টা আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।