হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন। দাগনভূঞায় পৌর এলাকার ভূঞা ম্যানশন দখলের চেষ্টা ও হামলায় গৃহকর্তা আবদুল গফুর ভূঞার মৃত্যুর ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২ জুন) গৃহকর্তার বড় ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু বাদী হয়ে আদালতে মামলা করলে দাগনভূঞা আমলী আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমান এ আদেশ দেন।
এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- নির্মল সাহা (৫০), চয়ন সাহা (৩৫), দহন সাহা (৩০), আইয়ুব আলী (৪৫), ছেরাজুল হক প্রকাশ হকসাব (৫০) এবং ইকবাল।
জানা গেছে, কাতার প্রবাসী আবদুল গফুর ভূঞা প্রায় ১৫ বছর আগে দাগনভূঞা পৌর এলাকার হাসপাতাল রোডের পলাশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে ছয় শতক জায়গা ক্রয় করেন। ওই জায়গায় ২০১৩ সালে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন। ২০২৩ সালে কাতার থেকে দেশে ফেরার পর পলাশ চন্দ্র সাহার ভাগ্নে সয়েল সাহা নিজেকে ওই জায়গার মালিক বলে দাবি করেন। তার কাছ থেকে জায়গাটির আমমোক্তারনামা নেন দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল নামে এক ব্যক্তি।
বুধবার (২৯ মে) দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ে আবদুল গফুর ভূঞার বাসা ভূঞা ম্যানশনে ৪০-৫০ জন যুবক হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা নিচতলায় দরজার বাইরে থেকে আটকিয়ে দ্বিতীয় তলায় গফুর ভূঞার বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধূ ও দেড় বছর বয়সী নাতনিকে মারধর করে। পরে ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফেরার পর ক্যান্সার আক্রান্ত হন আবদুল গফুর ভূঞা। হামলার ঘটনার একদিন আগেও ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
মামলার বাদী রিয়াদ হোসেন রাজু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ভবন ও জায়গা দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন বাড়ি ছেড়ে দিতে বারবার হুমকি দিয়েছেন। তার নির্দেশে এ হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা বাবাকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মারে। এ সময় তার শরীরের অস্ত্রোপচারের স্থানে আঘাত লাগে। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার (১ জুন) সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের জগতপুর এলাকায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করা হয়েছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ও মদদদাতাদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনকে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।
দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। আদালতের আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।