সব প্রাণীর
আলোক-সংবেদনশীল অঙ্গ ও দর্শনেন্দ্রীয় অঙ্গের নাম চোখ। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সরল চোখ কেবল
আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করতে পারে। উন্নত প্রাণীর অপেক্ষাকৃত জটিল গঠনের
চোখগুলো দিয়ে আকৃতি ও বর্ণ পৃথক করা যায়। চোখের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশের একটি হচ্ছে
কর্নিয়া। কর্নিয়া চোখের সম্মুখ প্রান্তের স্বচ্ছ অংশ। এটি ঢেকে রাখে আইরিশ এবং পিউপিলকে।
পিউপিল হলো আইরিশের মাঝের ছিদ্র, যা ছানিমুক্ত চোখে কালচে দেখায় এবং ছানিযুক্ত চোখে
ছানির পরিপক্বতার মাত্রা অনুসারে ধূসর বা সাদা দেখায়। স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য কর্নিয়া
স্বচ্ছ থাকা আবশ্যক। কর্নিয়ায় কোনো রক্তনালি না থাকাটা এর স্বচ্ছ হওয়ার অন্যতম একটি
কারণ। স্বচ্ছতার কারণে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পেছনের রেটিনার
ওপর পড়তে পারে। তখন আমরা কোনো বস্তুকে দেখতে পাই।
চোখের কর্নিয়ায় আঘাত: যেহেতু চোখ শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, তাই সাবধান থাকাও
জরুরি। যে কোনো কারণেই চোখের কর্নিয়ায় আঘাত লাগতে পারে। নখের আঁচড়, নখ কাটার সময় তা
ছিটকে চোখে লাগা, কলম বা পেনসিলের খোঁচা লাগা, ঝালাইয়ের কাজের সময় কোনো ধাতব কণা ছিটকে
চোখে লাগা, চোখ প্রচণ্ড ভাবে চুলকালে, চোখে কোনো রাসায়নিক পদার্থ পড়া, কৃষিকাজের সময়
ধান-গমজাতীয় ফসলের ধারাল অংশের আঘাতের কারণে কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বোঝা যাবে যেভাবে: কর্নিয়ায় আঘাত লাগলে চোখে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে
রয়েছে- চোখে ব্যথা, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে জ্বালাপোড়া।
সমস্যা হলে মনে হতে পারে চোখের ভেতর কিছু রয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করতে অথবা চোখের পলক ফেলার
সময় ব্যথা বেড়ে যায়। কর্নিয়ার আঘাত গুরুতর হলে রোগী চোখ বন্ধ করতে পারবেন না। ব্যথার
সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে অস্বস্তি।
করণীয়: রাসায়নিকের
কারণে কর্নিয়ায় আঘাত লাগলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
তারপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রাসায়নিক ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ চোখে ঢুকলে দুয়েকবার
পানি দিয়ে ধুয়ে দেখতে হবে পদার্থটি বেরিয়ে আসে কিনা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবশ্যই
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক
মলম দিয়ে প্যাড ও ব্যান্ডেজের সাহায্যে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। চোখে আঘাত লাগলে নিজে
থেকে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। চিকিৎসক পরিস্থিতি
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। দ্রুত চিকিৎসা না করলে তা আরও গভীর হয়ে চোখে ছিদ্র হতে পারে,
যার কারণে রোগী হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি। সমস্যার কারণে কর্নিয়ায় এক ধরনের অস্বচ্ছতা
বা দাগ সৃষ্টি হয়, যার জন্য দৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
সতর্কতা: পেশাগত প্রয়োজনে
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হলে কাজের সময় অবশ্যই নিরাপত্তামূলক চশমা পরে নিতে হবে। অনেক ধুলাবালি
বা ক্ষুদ্র কণা ওড়ে (যেমন- নির্মাণকাজ) এমন জায়গায় রোদচশমা পরতে হবে।