উষ্ণতম সময় মে মাসে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হতে পারে প্রবল মাত্রায় শক্তিশালী। বঙ্গোপসাগরে এমনি একটি ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল থেকে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দূরে যেটি গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে, সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানবেই, এমনটি একেবারে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির মডেল দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে এটি অগ্রসর হচ্ছে। বুধবারের (১০ মে) মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের সম্ভাব্য গতিপথ বিবেচনা করলে বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ উপকূল দিয়ে ঝড়টি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত: প্রতিমন্ত্রী
নামকরণ: গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হলে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এবার সে ঝড়ের নাম হবে ‘মোখা’।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে বিশ্বের ১৩টি দেশ। ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অন্তর্গত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ওমান ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে আসছে। সে অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন/ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ইয়েমেন। কফির জন্য খ্যাত ইয়েমেনের ‘মোখা’ বন্দরের নামে ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে।
গতিপথ: আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বুধবার সকালে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়।
আরও পড়ুন: ‘মোখা’ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ১০ নির্দেশনা
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গভীর নিম্নচাপটি ১০ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১১ মে তা পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
এরপর ঘূর্ণিঝড়টি প্রাথমিকভাবে ১১ মে (বৃহস্পতিবার) উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এরপর ধীরে ধীরে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোতে পারে।
কবে আঘাত হানতে পারে: কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে’র মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার প্রবল শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, লঘুচাপটি ১০ মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে, যা ইতোমধ্যে হয়েছে এবং ১১ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। একই আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরও।
শক্তি ও প্রভাব: আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, উপকূলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পরে ১৬০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঝড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো সাত থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে ‘মোখা’
কেন এত শক্তিশালী: আবহাওয়াবিদরা জানান, এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের এই সময়টায় সূর্য বঙ্গোপসাগরের ঠিক ওপরে থাকে। রোদের তাপে বাতাস গরম হয়ে ওপরে উঠে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি সুপ্ত তাপ নিয়ে বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়। এটা যত বেশি দিন ধরে হয়, তত বেশি শক্তি সঞ্চিত হয়। ফলে এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয়। এছাড়া এ বছর যেহেতু এখনও কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি, তাই আসন্ন ঘূর্ণিঝড় অনেক শক্তিশালী হতে পারে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।