অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। ফলে এর কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন,
"পদ্মা সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে তৈরি করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে
তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং এর মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।"
করোনা পরিস্থিতি
অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পর সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সংবাদ
সম্মেলন। করোনাকালে সরকার প্রধানের সংবাদ সম্মেলনগুলোতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকরা।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, "প্রমত্তা পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা
থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলো। দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরাই জানেন, কী ঝুঁকি নিয়ে
আর কত কষ্ট এবং সময় ব্যয় করে রাজধানীতে পৌঁছতে হয়।"
তিনি বলেন,
"১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা
নদী এবং রূপসা নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। জাপান সরকার দু’টি নদীর উপরই সেতু নির্মাণে রাজি
হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদী সমীক্ষা শুরু করে। আর রূপসা
নদীর উপর আমার অনুরোধে পূর্বেই নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০১ সালে পদ্মার নদীর উপর সেতু
নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়।"
‘জাপানের সমীক্ষায় মুসীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের
স্থান নির্বাচন করা হয়। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ঠা জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে
আমি মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের
নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামাত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে
সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা
প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া
প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।’
‘২০০৯ সালে আমরা আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ
অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ২২ দিনের মাথায় পদ্মা
সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ডভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল এইকমণ’কে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
শেখ হাসিনা
জানান, শুরুতে সেতু প্রকল্পে রেল চলাচলের সুবিধা ছিলো না।
তিনি বলেন,
"আমি রেল সুবিধা যুক্ত করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের নির্দেশ দেই। ২০১০ সালের মধ্যে
নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরের বছর জানুয়ারিতে ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনীতে প্রকল্পের
ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। শুরুতে
মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক পাঁচ-আট কিলোমিটার। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক
এক-পাঁচ কিলোমিটার হয়। প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে
নৌ-যান চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়েছিল। পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান
চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
‘সংশোধিত ডিপিপিতে বেশি ভার বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা
হয়। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা
ধরা হয়। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ব্যয়ও।’