বাণিজ্যিক সিনেমার দাপটে কোনোদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্র। লগ্নিকৃত টাকা উঠে আসার নিশ্চয়তা না থাকায় নির্মাতারা এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণে সাহস করেন না। তবে এর বাইরে কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতে হাঁটেন। তাদের একজন প্রদীপ ঘোষ। দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের যে বিস্ময়কর ও সাহসিকতাপূর্ণ অভ্যুত্থান ঘটেছিল সেই ইতিহাসকে ধারণ করে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ শিরোনামের একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। প্রদীপ ঘোষ সেটিকে সেলুলয়েডে তুলে আনছেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবিতে প্রীতিলতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। আর বিপ্লবী রামকৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন মনোজ প্রামানিক। ২০২০ সালের অক্টোবরে শুরু হয় সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। কোন পর্যায়ে আছে সিনেমাটির কাজ— জানতে যোগাযোগ করা হয় পরিচালকের সঙ্গে। তিনি জানান, ছবির শ্যুটিং শেষ। এখন চলছে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ।
প্রদীপ ঘোষ বলেন, শ্যুটিং শেষ করেছি আমরা। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। সাউন্ড আর কালার কারেকশান করছি এখন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’র উদ্বোধন করাতে চাই। তিনি তারিখ দিলে সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ সিনেমাটি মুক্তি দেব। কেননা, ওই দিন প্রীতিলতার প্রয়াণ দিবস। শুধু সিনেপ্লেক্স মুক্তির লক্ষ্যে সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে না। সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শকের কাছেও পৌঁছে দিতে চান প্রীতিলতাকে। শুধু তাই নয়, ভারতের দর্শকও দেখতে পারবেন এই ছবি।
প্রদীপ বলেন, ভারতে মুক্তি পাবে ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’। বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। অন্য দেশে সিনেমা মুক্তি দিতে চাইলে ডিপ্লোমেটিক কিছু বিষয় থাকে। সেগুলো দূতাবাস থেকে করে দেবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিনে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রী যদি উদ্বোধন করে দেন, তাহলে কাজটা আরও সহজ হয়ে যাবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে, আগে বাংলাদেশে মুক্তির পক্ষে। তারপর ভারতে মুক্তি। যেমন জমকালো আয়োজনে মহরত করেছিলাম। তেমনভাবে ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানও করব। জুন মাস থেকে আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করে দেব।
সিনেমাটি নির্মাণ করতে পেরে বেশ তৃপ্ত প্রদীপ ঘোষ। কারণ, প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় দৃশ্যধারণ করতে পেরেছেন তিনি। এ নির্মাতা বলেন, যে গ্রামগুলোতে বিপ্লবীরা ত্রিশের দশকে লড়াই করেছেন, সেসব গ্রামেই শ্যুটিং করেছি। পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব, ঐতিহাসিক ধলঘাট যুদ্ধের দৃশ্যধারণ করেছি। চলচ্চিত্রটি নতুন প্রজন্মের কাছে দলিল হয়ে থাকবে। সেজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা শেষে আহত প্রীতিলতা ব্রিটিশ সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে নিজের কাছে রাখা ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে করে আত্মাহুতি দেন।