বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মার্কিন ব্যাংক খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। একদিনে ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলার তুলে নেন আমানতকারীরা। সিলিকন ভ্যালির এ ব্যাংকটি ধসে পড়ায় তার ধাক্কা লেগেছে গোটা বিশ্বে। ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন প্রস্তুতকারক থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া দূরত্বের কোনো নতুন উদ্যোগ, সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে এ ঘটনা। ব্যাংক বন্ধের এ ঘটনা প্রত্যেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে যে এ রকম ঘটনা যদি তাদের ব্যাংকের সঙ্গে ঘটে তাহলে সে আর্থিক সংকট কীভাবে মোকাবেলা করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসভিবির এ ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জোরপূর্বক ঘটানো হয়নি, বরং ব্যাংকের নিজের ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মুডি’স অ্যানালিটিকসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যানডি বলেন, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ব্যর্থতার মূল কারণ প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে এর সংযোগ। কারণ সুদের হার বাড়ায় প্রযুক্তি খাতে তার প্রভাব পড়েছে বেশি এবং ভোক্তা চাহিদায়ও পরিবর্তন এসেছে।
কেন ব্যাংকটির এ অবস্থা হয়েছে তার পেছনে কিছু ঘটনাক্রমের কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ব্যাংক ধসের ঘটনাকে ছয়টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে ফেডারেল রিজার্ভের ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কথা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছর থেকেই ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়াতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ঝুঁকি নিতে চান না। প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে, সুদর হার বৃদ্ধি তাদের ঝুঁকিযুক্ত বিনিয়োগবিমুখ করেছে। আর যেহেতু সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকটির প্রাথমিক গ্রাহকরা সব প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট তাই এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি ব্যাংকটির ওপর। ব্যাংকের কিছু গ্রাহক নগদ অর্থের সংকটে পড়েন। কারণ সুদের হার বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ধাক্কায় কিছু স্টার্টআপ বন্ধ হয়ে যায়।
বেসরকারি পর্যায়ের তহবিল সংগ্রহও বেশ মূল্যবান হয়ে ওঠে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের কিছু গ্রাহক তারল্য সংকট মেটাতে নিজেদের অর্থ তুলে নিতে শুরু করেন। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে গত বুধবার ব্যাংকটি অনেকটা লোকসানেই ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বন্ড পোর্টফোলিও বিক্রি শুরু করে। ব্যালান্স শিট শক্তিশালী করতে বুধবার এসভিবি ২২৫ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায়। এতেই কাল হয়ে দাঁড়ায় ব্যাংকের পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার দিনভর আমানতকারীরা আমানত তুলে নেয়ায় ব্যাপক আকারে মূলধন সংকট দেখা দেয়। সংকটময় পরিস্থিতিতে ৪৮ ঘণ্টাও টিকতে না পেরে ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসম জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার বিষয়ে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। যেন মানুষের জীবনধারণ, চাকরি এবং গোটা ব্যবস্থার সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকের এ পতনের বিশদ কারণ হয়তো সামনের দিনগুলোয় উঠে আসবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে চাইলে এ পতন এড়ানো যেত। এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগের অভাবের কারণ, যা ব্যাংকটির বিষয়ে গ্রাহকের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাসের শূন্যতা তৈরি করে।