পতনের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) জন্য মার্কিন সরকার কোনো বেইলআউট দেবে না বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন। তবে যেসব আমানতকারীর ব্যাংকটিতে অর্থ রয়েছে এবং যারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য কাজ করবে সরকার।
এসভিবিতে দ্য ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বীমা আমানত জমা ছিল। তবে ব্যাংকটির ব্যবহারকারী বেশির ভাগ কোম্পানি ও বিত্তশালী মানুষ প্রযুক্তিসংক্রান্ত স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যাদের অ্যাকাউন্টে এর চেয়েও বেশি অর্থ ছিল। যেখানে জমা ছিল এসব কোম্পানির হয়ে কাজ করা কর্মীদের বেতন। এখন দেশজুড়ে এসব কর্মীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে তারা আদৌ তাদের বেতনের চেক ভাঙাতে পারবেন কিনা।
সিবিএস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনেট ইয়েলেন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কিছু তথ্য দেন। তবে তিনি জোর দিয়ে এটাও বলেন, ‘১৫ বছর আগে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক বেশি আলাদা। সে সময় ব্যাংক খাতকে বাঁচাতে সরকার বেইলআউট ঘোষণা করেছিল। আমরা সেই একই পদক্ষেপ এবার আর নেব না। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আসলেই সুরক্ষিত এবং এ খাতে পর্যাপ্ত মূলধন রয়েছে। খাতটির স্থিতিস্থাপকত্বও বজায় রয়েছে। তবে আমরা আমানতকারীদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। কীভাবে তাদের প্রয়োজন মেটানো যায়, আপাতত সে বিষয়টিতেই আমরা নজর দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেশটির ১৬তম বৃহত্তম ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ব্যাংকিং খাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম পতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল এর নাম। এর আগে ২০০৮ সালে ধস নামে ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকে। এসভিবি মূলত প্রযুক্তি খাতে ঋণ দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক উচ্চসুদের হার দিয়ে প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে ক্ষতি এড়ানোর সুযোগ ছিল না। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণেও বলা হয়েছে ফেডারেল রিজার্ভের ক্রমবর্ধমান সুদহারের কথা। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ঝুঁকি নিতে চাননি। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকটির ওপর। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে গত বুধবার ব্যাংকটি অনেকটা লোকসানেই ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বন্ড পোর্টফোলিও বিক্রি শুরু করে। ব্যালান্স শিট শক্তিশালী করতে এসভিবি ২২৫ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারদর ৬০ শতাংশ কমে যায়। এতে আতঙ্কিত আমানতকারীরা বৃহস্পতিবার দিনভর তুলে নেন আমানত। ফলে ব্যাপক আকারে মূলধন সংকট দেখা দেয়। সংকটময় পরিস্থিতিতে ৪৮ ঘণ্টাও টিকতে না পেরে ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
সিবিএস নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সুদহার বৃদ্ধির বিষয়েও কথা বলেছেন জেনেট ইয়েলেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতেই ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার বাড়াতে হয়েছে। এ থেকেই সংকটের মুখে পড়েছে এসভিবি। তবে তিনি এটাও প্রত্যাশা করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিশ্চয়ই ব্যাংকটি অন্য প্রতিষ্ঠানের অধিগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিসহ পরিস্থিতি সামাল দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নেবে।
অবশ্য এরই মধ্যে খবর এসেছে, মাত্র ১ পাউন্ডে এসভিবির যুক্তরাজ্য শাখা কিনে নিচ্ছে লন্ডনভিত্তিক এইচএসবিসি। ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিওই এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংক এইচএসবিসি। এর শক্তি, সক্ষমতা ও নিরাপত্তায় এসভিবি ইউকের গ্রাহকরা আস্থা রাখতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ ও মজবুত এবং নগদ অর্থপ্রবাহ স্থিতিশীল। এসভিবি ইউকেতে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ। অন্যান্য ব্যাংকিং সেবাও স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়।