![Image](https://cdn.ajkerdarpon.com/images/6ea65146fe289c64b347d5c7a23a5825.jpeg)
গোলাম রসুল। কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। ২০১২ সালে র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। এসিড নিক্ষেপসহ একাধিক মামলার আসামী গোলাম রসুল ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। নিয়োগ বানিজ্য আর হানিট্র্যাপের ব্যবসা করে হাতিয়ে নিয়েছন কোটি কোটি টাকা। এমপি আনারের অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যাওয়ার পেছনে এই গোলাম রসুলের হাত রয়েছে। ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও তার ভয়ে তটস্থ থাকেন মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সাধারণ ক্লার্ক হয়েও নিজে কাঁচের ঘর তৈরী করে নিয়েছেন। আছে একাধিত রক্ষিতা। এমপি আনারের নাম ভাঙিয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কখনো র্যাবের সোর্স আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এখন তিনি বিপুল সম্পদের মালিক। বলছি এমপি আনারের বন্ধু পরিচয়দানকারী গোলাম রসুলের কথা। গোলাম রসুল উপজেলার ফয়লা গ্রামের আফসার আলীর ছেলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম রসুল একসময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন এসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা হয় গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে। এরপর একই সালের ৬ নভেম্বর আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধে দ্রূত বিচারে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের হয়। কিন্তু এসব মামলায় কিছুই হয়নি তার। ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর র্যাব বাবা ওরফে গোলাম রসুলকে আটক করে র্যাব। সে সময় তার আটকের ছবিও প্রকাশ করে র্যাব। ২০১৪ সালে আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি হওয়ার পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। প্রতিটি মামলা থেকে খালাস পেতে থাকেন। ২০১৪ সালে তার বন্ধু আনোয়ারুল আজীম আনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন গোলাম রসুল।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিসহ একাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সভাপতি আছেন। বন্ধু এমপির দাপটে কোনবারেই নির্বাচন করা লাগেনি তার। কেউ সভাপতি পদে ভোট করতে চাইলে তাকে ভয় দেখিয়ে মাঠ ছাড়া করেন। মোবারকগঞ্জ চিনিকল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকও তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি এই পদে বহাল। দুই বছর পর পর কমিটি করার কথা থাকলেও তিনি এমপির ভয় দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পদ বাগিয়ে নিয়ে বসে আছেন। এই সমবায় সমিতিতে রয়েছে দুটি তেলপাম্প ও দুটি পুকুর। ভয়ে কেউ এসবের হিসাব নিতে পারে না। নিজের ইচ্ছায় পরিচালনা হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও তিনি মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, শহীদ নুর আলী কলেজের সদস্য, কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কালীগঞ্জ ফুড সেফটির সভাপতি, আলহাজ¦ বদর উদ্দিন ও এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতিও তিনি। একাধিক মসজিদ-মাদ্রাসার সভাপতিও এই গোলাম রসুল। অভিযোগ উঠেছে মোবারকগঞ্জ চিনিকলে গত মাড়াই মৌসুমে ১৩২ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন এই গোলাম রসুল। তাদের কাছ প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া ১৭৩ জনকে চাকরী স্থায়ী করার কথা বলে নিয়েছেন ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু তাদের চাকরী স্থায়ী হয়নি। নিয়োগকৃতদের মধ্যে ৭ জন নারী রয়েছে। এদের কি কারণে চাকরী দিয়েছেন তা রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। এক বিধবা নারী রয়েছে গোলাম রসুলের পিএস। তাকেও চাকরী দেওয়া হয়েছে সুগার মিলে। এ ভাব বাপ দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি বানানো হয়েছে মোচিক। মোচিকের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গোলাম রসুল দখল করে রেখেছেন। শোনা যাচ্ছে মিল এরিয়ার সোনালী ব্যাংকে থাকা শ্রমিকদের প্রবিডেন্ট ফান্ডের কোটি কোটি টাকাও গায়েব করে দিয়েছেন এই গোলাম রসুল। গোলাম রসুলের সম্পকের পরিমাণ জানা না গেলেও সম্প্রতি তিনি থাইল্যান্ডে রিসোর্ট কিনেছেন। ঢাকায় আছে একাধিক ফ্ল্যাট। কালীগঞ্জ শহরের ভুষন স্কুল রোডে রয়েছে চারতলা বাড়ি। এদিকে গোলঅম রসুলের নিজ গ্রাম ফয়লায় তার ভাইপো রকিকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং এর সম্রাজ্য।
কিছুদিন আগে মদসহ ধরা পড়ে ওই গ্যাংয়ের সদস্য। গোলাম রসুলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার ভাইপোর নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা করানো হয়। আনার হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের আলীশান বাংলো বাড়িতে যাতায়াত ছিল গোলাম রসুলের।
এ ব্যাপারে গোলাম রসুল বলেন, তিনি দুইবার শাহীনের বাংলোতে গিয়েছেন এমপির সাথে। একবার বিয়েতে আর একবার দর্শনা থেকে ফেরার পথে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসিড নিক্ষেপ মামলা দিয়েছিল। একবছর পর সেটি মিমাংসা হয়। জনপ্রিয়তার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে সভাপতি পদে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে দাঁড়ায় না। আমার নামে সুগার মিলের কোন কিছু লিজ নেই।