ঠাকুরগাঁওয়ে সুদারুদের চাপ ও মানসিক নির্যাতন
সহ্য করতে না পেরে শিক্ষকসহ সাতজনের নাম চিরকুটে লিখে আত্মহত্যার করেছে এক যুবক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ঠাকুরগাঁও
পৌর শহরের মাদ্রাসাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত শফিকুল ইসলাম (৪৫) ওই এলাকার মৃত
জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর থানার
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবি.এম ফিরোজ ওয়াহিদ। তবে সুদখোরদের হুমকিতে
আতঙ্কে রয়েছে নিহতের পরিবারের লোকজন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সম্ভবত রাত তিন
থেকে চারটার দিকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সকালে তার লাশটি ঘরের বারান্দায় দেখতে পায়
তারা। পরে তারা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি
চিরকুটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ওই চিরকুটে ৭ জনের নাম রয়েছে। তবে কী কারণে
তিনি আত্মহত্যা করেছেন সেটা জানি না। আমরা টাঙ্গাইল থেকে এসেছি। আমাদের এখানে আত্মীয়-স্বজন
কেউ নেই বলে জানান নিহতের পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নিহত শফিকুল
ইসলাম পাঁচ মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মাদ্রাসা পাড়ায় দীর্ঘদিন
ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি ফেরি করে কাপড় ব্যবসা করতেন। পুলিশ লাইনের সামনে একটি
পানের দোকান রয়েছেও তাঁর। এই বড় পরিবার তিনি চালাতে গিয়ে প্রায় হিমশিম খেতে ছিলেন।
এ সময় তিনি বেশ কয়েকজনের কাছে ঋণ মাহাজন করেছিলান। আর ঋণ মাহাজনের টাকার জন্য বিভিন্নভাবে
চাপ প্রয়োগ করতেন সুদখোররা। চাপ সহ্য করতে না পেরে ভোররাতে ঘরের বারান্দায় চালার বাশের
সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে মৃত্যুর আগে এক চিরকুটে শিক্ষকসহ সাতজনের
নাম লিখে যান তিনি।
চিরকুটে যে সাতজনের নাম লিখে গেছেন তারা
হলেন, মো. জুয়েল ইসলাম, মো. হুমায়ুন কবীর, মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম, মো. আশরাফুল ইসলাম,
মো. হাবু ও পৌর শহরের কলোনির একজন।
চিরকুটে যাদের নাম রয়েছে তাদের সঙ্গে
যোগাযোগ করা তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজী হননি।
সুদের ভয়াল ছোবলে নি:শ্ব হওয়া নাম প্রকাশ
অনিচ্ছুক একজন জানান, আমি বিপদে পরে এক বোর্ড অফিস এলাকার জাহাঙ্গীর সুদারুর কাছ থেকে
কিছু টাকা নিয়ে ছিলাম। সে আমার ব্যাংক চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সেই টাকার
৫ গুন লাভ দিয়েও ঋণের হাত থেকে রেহাই পাইনি।
পরে সুদ পরিশোধ করতে সমিতি থেকে কিস্তি তুলি। এভাবে দেনা বাড়তে বাড়তে বাড়ির জায়গা পর্যন্ত
বিক্রি করে এখন আমি নিঃস্ব।
সুদের টাকা দিতে দেরি হলে বিভিন্ন রকম
হুমকি ধামকি ও অশ্লীল ভাষায় গালাগালিও করে সুদখোররা। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদও করা যায় না। সুদারুদের কাছে সর্বস্ব দিয়েও এর হাত থেকে রেহায় পাচ্ছেন না
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ।
সমাজ উন্নয়নকর্মী মনিরুজ্জামান মিলন বলেন,
বর্তমানে সুদখোরেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইন না থাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন।
সুদ গ্রহিতার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও ফাঁকা চেক নিয়ে জিম্মি করছে তাদের।
অনেক ক্ষেত্রে আসল ও কিছু সুদের টাকা পরিশোধ করলেও সুদের সুদ দিতে না পারলে ঐ দুই কাগজের
বলে আইনের মারপ্যাচে জেলে যেতে হচ্ছে অসহায় সুদ গ্রহিতাকে।
তিনি আরো বলেন, এখানে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে।
গরিব আরো গরিব হচ্ছে। যার ন্যূনতম একটা সম্মানবোধ আছে, তিনি হয়ত আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু
আমাদের দেশে তো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে অনেকেই আয়েসে জীবন যাপন করছেন।
তাদের ঐ সম্মানবোধটাই নেই। ফলে অনেকে জীবন বাঁচাতে ঋণ নিয়ে সেটারই ফাঁদে পড়ছে। যার
ফলে এই ধরনের ঘটনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা ওসি এবি এম
ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। তিনি চিরকুটে কয়েকজনের নাম লিখে আত্মহত্যা
করেছেন এটি কি তিনি লিখেছেন নাকি কাউকে ফাঁসানোর জন্য অন্য কেউ লিখে রেখেছেন সেটা আমরা
তদন্ত করে দেখছি। এ মুহূর্তে অন্য কিছু বলা সম্ভব না।