কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে ঠাকুরগাঁওয়ের
পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা সুকুমার রায়।
পরে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
গতকাল বুধবার (২৯ মে) সেখানে ভোটগ্রহণ
অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তিনি শুধু পরাজিতই হননি, জামানতও হারিয়েছেন। সুকুমার রায় পীরগঞ্জ
উপজেলা বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান।
বর্তমান সরকারের অধীন সব নির্বাচনই বর্জন
করেছে বিএনপি, পাশাপাশি এই নির্বাচন বর্জনে জনগণকেও আহ্বান জানাচ্ছে দলটি। এসব পদক্ষেপ
উপেক্ষা করে দলটির যেসব নেতা নির্বাচনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিএনপির শীর্ষ
নেতৃত্ব কঠোর অবস্থানে। এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
পদে প্রার্থী হন উপজেলা বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির
সদস্য সুকুমার রায়। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ১৩ মে বিএনপির
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির সাক্ষরিত এক চিঠিতে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার
করা হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং
কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে
৬০ হাজার ৮০০ ভোট জয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুল
ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাওয়ানুল হক বিপ্লব ঘোড়া প্রতীক নিয়ে
ভোট পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৩১৫টি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সুকুমার রায় পেয়েছেন ৯ হাজার ৪১৬
ভোট।
উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০২৪
অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট যদি মোট প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশের
কম হয়, তাহলে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। গতকালের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১ লাখ ২১ হাজার
৫৮৬টি। সেই হিসাবে ১৫ শতাংশ ভোট হবে ১৮ হাজার ২৩৮টি। কিন্তু সুকুমার রায় পেয়েছেন মোট
প্রদত্ত ভোটের ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ । নির্ধারিত ভোটের চেয়ে কম পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন
তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারের
শুরুতে বিএনপি নেতা প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই অংশ নেন। তবে দল থেকে
বহিষ্কৃত হওয়ার পর প্রার্থীদের কাছ থেকে সরে যান দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রচারণায় আর অংশ
নেননি। এ কারণে নির্বাচনের ভোটের মাঠে সুকুমার রায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে সুকুমার রায় জানান, আমি জয়ের
জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু দলের লোকজন একজন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে
কাজ করেছেন। মাঠে আমার আরও বেশি ভোট আছে। এত কম ভোট পাওয়ার নেপথ্যের কারণটি আমি এখন
বলতে চাচ্ছি না। এটা একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়।
আর দল থেকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
‘নির্বাচন করতে
গিয়ে সারা দেশেই বিএনপির অনেকেই বহিষ্কার করা হয়েছেন। দল যদি আমাদের ফেরত নেয়, তবে
ভালো কথা। আর সে সুযোগ না দিলে, দলের সমর্থক হয়ে থাকব।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম বলেন, দলের নির্দেশনা অসম্মান করা বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। এ কারণে
দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায়
তাঁর পাশে দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা ছিলেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইত্তাশাম
উল হক তালা প্রতীক নিয়ে ৮১ হাজার ৭১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী
আবু সাঈদ আকলিমুর রহমান টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ১৭ হাজার ৭২৭ ভোট পেয়েছেন। আর মহিলা ভাইস
চেয়ারম্যান পদে মাহফুজা বেগম আকতার কলস প্রতীক নিয়ে ৪০ হাজার ৫৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত
হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় রাণী রায় হাঁস প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ৭৯৬
ভোট পেয়েছেন।
এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন
মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪ জন
ও মহিলা ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭ জন। আর ভোট কেন্দ্র ৬৬টি। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩
জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করেছেন।