আবারও বঙ্গবন্ধু
কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। এই নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা চারবার
শিরোপা বুঝে নিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। আজ নেপালের বিপক্ষে তিনটি লোনাসহ ৪৫-৩১ পয়েন্টে
জিতে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা ধরে রেখেছে স্বাগতিকরা।
টানা চার আসরেই
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, তাও অপরাজিত; বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেই এটি বিরল ইতিহাস। স্বাধীনতার
পর থেকে এ যাবত ক্রীড়ার কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে টানা চারবার শিরোপা জেতেনি
বাংলাদেশ। চারটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে টানা ২৪ ম্যাচে অপরাজিত বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে
কেনিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে নেপাল। তবে কঠিন সেই ম্যাচ খেলার ২২ ঘণ্টা পর ফাইনাল
খেলতে নামায় নেপালি খেলোয়াড়দের শরীর ও চোখে-মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। তবে ফাইনালে
বাংলাদেশের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পেছনে এটা বড় কোনো বিষয় ছিল না। আবদুল জলিল,
সুবিমল দাসের শিষ্যরা এবার একটা দল হয়ে খেলেছে। পেয়েছে ১০ হাজার আসনের মিরপুর শহীদ
সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের গ্যালারির সমর্থন। বাংলাদেশকে হারানোর মতো শক্তি
যেমন নেপালীদের ছিল না, পিছিয়ে ছিল দক্ষতা, কৌশলেও।
সেমিফাইনাল
জেতার পর কেনিয়াকে নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নেপাল জেতার পরই তাদের
নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে নামেন আবদুল জলিল, সুবিমল দাসেরা। নিজেদের কাবাডির ইতিহাসে প্রথম
কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠায় এমনিতেই স্নায়ুচাপে ছিল নেপাল। তার ওপর স্বাগতিক
দর্শকের চাপ।
নেপাল মূলত
খেলেছে ঘনশ্যাম রোকা মাগার ওপর নির্ভর হয়ে। সেমিফাইনালে কেনিয়া তার কৌশলের সাথেই
কুলিয়ে উঠতে পারেনি। ফাইনালের আগে স্বাগতিকরা তাকে নিয়ে হোমওয়ার্কের সুফল পেয়েছে
ম্যাচের শুরু থেকেই। কোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্রথম রেইড থেকেই। মাত্র ৮ মিনিটে
প্রথম লোনা, চাপ কাটিয়ে উঠতে না পারায় প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকে ২৪-১০
পয়েন্টে, শেষ পর্যন্ত ৪৫-৩১ পয়েন্ট ম্যাচ জয়। ফাইনালে ঘনশ্যাম রোকা মাগারকে কড়া
মার্কিংয়ে রাখায় স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেননি তিনি। তারপরও সাত ম্যাচের মধ্যে
পাঁচবার ম্যাচ সেরা হয়ে পেয়েছেন আসর সেরার স্বীকৃতি। বাংলাদেশের মিজানুর রহমান হয়েছেন
টুর্নামেন্ট সেরা রেইডার, রোমান হোসেন সেরা ক্যাচার।
বিদায়ী ম্যাচে
ফাইনাল সেরা বাংলাদেশ অধিনায়ক আরুদুজ্জামান মুন্সী বলেন, ‘এবার আমাদের দলটা আগের তিন আসরের
চেয়ে গোছালো, শুরু থেকে এক দল হয়ে খেলতে পারায় প্রতিটি ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিততে
পেরেছি। কোরিয়া, জাপান, কেনিয়ার মতো বড় দল থাকলেও আমরা চাপমুক্ত থেকে খেলার চেষ্টা
করেছি, সেভাবেই সফল হয়েছি।’
ম্যাচ শুরুর
আগে মুকুট পরিয়ে আরুদুজ্জামান মুন্সীর আন্তর্জাতিক কাবাডিকে বিদায় জানানোকে স্মরণীয়
করে দেয় কাবাডি ফেডারেশন। এটাকে ‘নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’ বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সোনালি ট্রফিতে অধিনায়কের বিদায়টাকে আরও
বেশি রাঙিয়ে দিয়েছেন সতীর্থরা।
বঙ্গবন্ধু কাপ
আন্তর্জাতিক কাবাডির আগের তিন আসরের মধ্যে প্রথম দুইবার (২০২১ ও ২০২২) কেনিয়াকে (৩৮-২৮
ও ৩৪-৩১) এবং ২০২৩ সালে গত আসরে চাইনিজ তাইপেকে ৪২-২৮ পয়েন্টে হারিয়ে হ্যাটট্রিক
চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
ফাইনাল শেষে
কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ চৌধুরী আবদুল্লাহ
আল মামুনের সভাপতিত্বে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
নওফেল। উপস্থিত ছিলেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার
হাবিবুর রহমান।
চ্যাম্পিয়ন:
বাংলাদেশ
রানার্সআপ:
নেপাল
ফাইনাল সেরা:
আরুদুজ্জামান মুন্সী (বাংলাদেশ)
টুর্নামেন্ট
সেরা: ঘনম্যাশ রোকা মাগার (নেপাল)
সেরা রেইডার:
মিজানুর রহমান (বাংলাদেশ)
সেরা ক্যাচার:
রোমান হোসেন (বাংলাদেশ)।