গাইবান্ধায়
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা খেয়া ঘাটে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০০ মিটার কাঠের ব্রিজ উদ্বোধনের
আগেই দেবে গেলো।
উপজেলা প্রকৌশলী
অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, গত ২০২২/২০২৩ অর্থ্যবছরে কাগজ কলমে ব্রিজের কাজ শেষ হলেও
ব্রিজের কাজ এখনো শেষ হয়নি। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২২ সালের আগষ্ট মাস আর শেষ
হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের মে মাসে। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে
ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। তবে ব্রিজ নির্মাণ না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী
অধিদপ্তর। বরাদ্দকৃত টাকা বিষয়টি স্থানীয় জনগণে নজরে আসলে উপজলা প্রকৌশলী অভিদপ্তরে
খোঁজখবর করলে কাঠের ব্রিজের কাজ শুরু করেন। কাঠের ব্রিজ নির্ধারিত সময়ে কাজ না করে
অসময় ব্রিজের কাজ শুরু করেন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। ২০২২-২০২৩ এর এডিপির বরাদ্দে কাজটি
পায় রানা এন্টারপ্রাইজ নামক গাইবান্ধার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি ক্রয় করে স্থানীয়
একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনথিয়া কন্ডাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে কাঠের
ব্রিজের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ সস্পন্ন হয়েছে। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাত
১০টার দিকে সেন্টারিংয়ের সিসি পিলারের নিচের মাঠি সরে গিয়ে মাঝখানে ২ ফুট দেবে যায়।
ফলে বেলকা এলাকার খেয়া ঘাটে নদীর উপর নির্মাণকৃত কাঠের ব্রিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
করছে স্থানীয় জনগণ। তবে নদীতে একটু স্রোত বারলেই ব্রিজটি ভেঙ্গে পরে যাবে। ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ কোন কাজেই আসবে না। এতে
একদিকে যেমন সরকারের ৩০ লক্ষ টাকা অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকহাজার মানুষের দুর্ভোগ
আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে নির্মাণকৃত ব্রিজ কোনও কাজেই আসছে না।
ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত
প্রকৌশলীর গাফিলতিতে ব্রিজ নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বেলকা এলাকার
বাসিন্দা সুরুজ্জামান বলেন, এর আগে এখানে কোনো ব্রিজ ছিলো না নৌকা দিয়ে পারাপার করা
লাগতো। এতে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে
আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে দেবে পড়েছে কাঠের ব্রিজ।
স্থানীয় জাহিদুল
মিয়া বলেন, আমরা ব্রিজের কষ্টে আছি। ব্রিজ না থাকায় এলাকায় কেউ ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতে
চান না। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে জমির দামও কমে গেছে। এবার যদি কাঠের ব্রিজ হচ্ছে তাহলে
হয়তো একটু উন্নয়নে মূখ দেখবো এখন দেখি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে নির্মাণ শেষ
হওয়ার আগেই সেতুটি দেবে গেছে। সেতু দেবে যাওয়ায় আরও দুর্ভোগ বাড়ল।
বেলকা ইউপি
চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ
দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনেন না।
এই মুহূর্তে ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষের
দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেল। তিনি আরও জানান, এটা দুঃখজনক। সরকারি অর্থের অপচয় করার জন্য
বাস্তবায়নকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাগির খাঁন বলেন, এই কাজটি রানা এন্টারপ্রাইজ নামক জেলা একটি
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি আমাকে করতে বলে তাই কাজটি আমি বাস্তবায়ন করি। তবে কাজটি
গত জুনের আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী
আব্দুল মান্নাফ জানান, তিনি এই উপজেলায় যোগদানের পুর্বে এই কাঠের ব্রিজের কাজ সম্পন্ন
হয়েছে। এবিষয়ে তেমন কিছু জানিনা। তবে ব্রিজটি পিলার দেবে গিয়েছে এর উপর দিয়ে চলাচল
এখন ঝুঁকি সম্পন্ন তাই চলাচল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিবেন।
তিনি আরও বলেন,
কাঠের ব্রিজ নির্মাণের কাজ ঠিক ছিলো না। নির্মাণের নিয়ম অনুসারেই কাজ ব্যাপক অনিয়ম
করেছে। সঠিক ভাবে ব্রিজে পিলার বসানো হয় নি।
উপজেলা নির্বাহী
অফিসার তারিকুল ইসলাম জানান, কাঠের ব্রিজ দেবে যাওয়ার বিষয়টি খুবেই দুঃখজনক। তবে একটি
তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।