ঠাকুরগাঁওয়ের পৌর শহরের পরিষদ পাড়ার ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠীর দুই শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর এক শিশুর বাবা-মাকেও মধ্যযুগীয় নিপীড়ন চালানোর
অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পরে ওই এক শিশুর মা দায়নি ঋষির (৪২) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
তবে এটি আত্নহত্যা নয়, হত্যা বলে দাবি নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। আর ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার
বলছেন, অপরাধী যেই হউক ছাড় পাবে না।
বুধবার (২২ মে) সকালে পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ড
পরিষদ পাড়ার একটি লিচু গাছে ওই নারীর লাশ ঝুলে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশে খবর
দিলে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহত দায়নি বিষু ঋষির স্ত্রী। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, গত
সোমবার পরিষদ পাড়ার লিটনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় লিটনসহ তার লোকজন পরদিন চোর
সন্দেহে দয়ান ঋষির ছোট ছেলে রাজেন (১৩) ও একই গ্রামের মৃত যোগেন এর ছেলে সঞ্জিত (১৫)
কে তারা বাসায় আটক করে রাখে। কিন্তু তাঁরা চুরি করেনি তার পরেও ছেড়ে না দিয়ে মারপিট
করতে থাকে। এরপর বিষু ঋষিকেও ধরে নিয়ে যায় তাঁরা। তবে বিষু ঋষিকে ছেড়ে দিলেও রাজেনকে
ছাড়েননি। এরপর রাজেনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আরও মারপিট করে। রাজেন মারপিটের ঠেলায় বলে,
এলাকার সঞ্জিত এর নাম বলে সে চুরি করেছে। এরপর সঞ্জিতকে খুঁজে বের করে। পরে দুজনকে
একদল উচ্ছৃংখল যুবকের হাতে তাদের তুলে দেন লিটন। পরে লিটনের আত্মীয় আমজাদসহ কয়েকজন
মিলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দোলন কুমার মজুমদারের সাথে দেখা করে চুরির বিষয়টি অবগত
করেন। এসময় কাউন্সিলর তাদের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা নেয়ার পরামর্শ দেন।
কিন্তু বাড়ির মালিক লিটন কাউন্সিলরের কথা
না শুনে চুরি ঘটনায় কয়েক লক্ষ টাকা ও কয়েক ভরি স্বর্ণ অলংকার খোয়া গেছে দাবি করে আটকৃতদের
কয়েক দফায় বেধরক মারপিট করে লিটনসহ তার লোকজন।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, ওই দুই কিশোর
ও বিষু ঋষিকে ছেড়ে দেয়ার পর ওই দিন রাতে অজ্ঞাতরা রাজেনের মা দায়নি ঋষিকে বাড়ি থেকে
ডেকে নেয় চুরির বিষয়টি সমাধানে। সে বাসায় না ফিরলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন স্বজনরা। পরে
বুধবার সকালে স্বজনরা তার লাশ গাছের ডালে ঝুলতে দেখে।
রাজেন ও সঞ্জিত জানায়, ২০-২৫জন আমাদের
শহরের গোবিন্দ নগর বড়বাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে লোহার রড, গাছের ডাল দিয়ে অনবরত পেটাতে
থাকে আর বলে ‘বল”আমরা টাকা চুরি করছি। শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল
তাও মারছিল। সঞ্জিত বলে সহ্য করতে না পেরে বলি রাজেনের মাকে চুরির টাকা গয়নাপাতি রাখতে
দিয়েছি। এরপর রাজেনের মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। টাকা
স্বর্ণ অলংকার তাদের কাছে উদ্ধার করতে না পেরে থানা নিয়ে যায়।
পরিবারের অভিযোগ লিটন ও তাঁর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা
দায়নিকে হত্যা করে গলায় শাড়ি পেছিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত
আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল
টিজ্ঞা জানান, দায়নি ঋষিকে পিটিয়ে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে। আর কত নির্যাতন
হলে বা মারা গেলে আদিবাসী নিরিহ মানুষগুলোর ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে? কেউ অপরাধ করলে
পুলিশ-প্রশাসন আছে। তাই তাই বলে এভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করতে হবে। তাঁরা তো চুরির
সময় ধরা পড়েনি। সন্দেহজনক ধরা হয়েছে। তবে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আর কত নির্যাতিত
হলে আমরা বিচার পাবো?
এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দোলন কুমার
মজুমদার জানান, চুরির ঘটনায় দুই কিশোরকে আটকের পর মারপিট করা হয় সেই বিষয়টি জানানো
হলে পুলিশের সহযোগীতা নেয়ার পরামর্শ দিলেও তারা শুনেনি। পরে সকালে জানতে পারি এক কিশোরের
মা গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। নিশ্চই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন পুলিশ।
আর পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম প্রসাদ পাঠক
বলেন, ইতিমধ্যে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে অপরাধী যেই হউক সে ছাড়
পাবে না।