চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা
কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) অপারেটর হিসেবে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে
টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নামে প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার (১০ জুন) পিসিটি দিয়ে মায়েরস্ক
দাভাও নামে একটি জাহাজ হ্যান্ডলিং মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করল।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় প্রথমবারের
মতো জাহাজ হ্যান্ডলিং উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও আরএসজিটি বাংলাদেশের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজ, আরএসজিটিআই বন্দরের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত
ছিলেন।
এটি ক্রেনযুক্ত ফিডার জাহাজটি মালয়েশিয়ার
পোর্ট ক্যালাং থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছে। এরপর পিসিটিতে প্রায় ৮০০ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের
একক) কনটেইনার ওঠানামা করে পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান বন্দরের উদ্দেশে
যাত্রা করে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে গত বছরের ডিসেম্বরে পিসিটি পরিচালনা ২২ বছরের জন্য
চুক্তিবদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর আরএসজিটিআই পিসিটিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি
সংযোজন করে।
আরএসজিটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সৌদি আরবের
শীর্ষ স্থানীয় বন্দর উন্নয়নকারী এবং অপারেটর। এটির ফ্ল্যাগশিপ টার্মিনাল জেদ্দা ইসলামিক
পোর্টে অবস্থিত এবং সৌদি আরবের লোহিত সাগরের বৃহত্তম কনটেইনার টার্মিনাল। এটি বার্ষিক
৬ দশমিক ২ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজগুলো
পরিচালনা করে থাকে।
আরএসজিটিআই সিইও এরউইন হেইজ বলেন, আমরা
ক্যাপ্টেন মায়ো মিন থান ও মায়েরস্ক দাভাওকে চট্টগ্রামে স্বাগত জানাতে পেরে গর্বিত।
এই নতুন কনসেশন চুক্তির অধীনে প্রথম আনুষ্ঠানিক জাহাজ আগমনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক
উদযাপন করছি। আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এবং বৈশ্বিক লজিস্টিক চেইনে চট্টগ্রাম বন্দরের
ভূমিকা বাড়াতে অবদান রাখার জন্য উন্মুখ।
বাংলাদেশ সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয়
রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমসসহ আরএসজিটিআইয়ের ব্যবসায়িক অংশীদার মায়েরস্ককে ধন্যবাদ
জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বাংলাদেশের শিপিং কমিউনিটি এবং বৈশ্বিক বন্দর
শিল্পকে বিশ্বমানের সেবা প্রদানের ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ দিয়েছে।
জানা গেছে, আরএসজিটিআই বাংলাদেশে কনটেইনার
টার্মিনাল খাতে প্রথম বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি পিসিটিতে ১৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
আগ্রহী। বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি পিসিটিতে চারটি উন্নত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন শিপ-টু-শোর
(এসটিএস) ক্রেন, রাবার-টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) এবং অন্যান্য আধুনিক কার্গো-হ্যান্ডলিং
সরঞ্জাম যুক্ত করছে। এতে টার্মিনালের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৬ লাখ টিইইউস
পর্যন্ত বাড়বে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্দরে পণ্য
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়াতে পিসিটি নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর সড়কের উদ্ধার করা নদীপাড়ের ৩২ একর জায়গায় ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পিসিটি
নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ
শুরু হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিসিটি
নির্মাণ করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার
কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ই–ইঞ্জিনিয়ারিং
এটির নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সৌদি
আরবের রেড সী গেটওয়ে লিমিটেডের সাথে গত ডিসেম্বরে চুক্তি সম্পাদনের পর তাদেরকে এই টার্মিনালটি
পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই চ্যানেলে কোনো বাঁক না থাকায় পিসিটি
বড় জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা পাবে। এই টার্মিনালে বছরে প্রায় ৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং
করা যাবে। টার্মিনালটিতে ১৬ একর ইয়ার্ড ও ৫৮৪ মিটার দীর্ঘ জেটি রয়েছে। জেটি এলাকায়
১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। এই টার্মিনালে ১৯০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের
৩টি কন্টেনার জাহাজ একসাথে এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে ১টি ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ
ভিড়ানো যাবে। এতে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের আরসিসি পেভমেন্ট (অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও
সড়ক), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ৬ মিটার উঁচু ১
হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, ১ হাজার
২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রপ্তানি
হয়ে থাকে। রপ্তানি বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে হয়। প্রতি বছর জাহাজ, কার্গো ও
কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রকল্প নিয়েছিল
বন্দর কর্তৃপক্ষ।